গ্রামাঞ্চলে বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে সৌর বিদ্যুতে ভরসা রাখছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। প্রাথমিক ভাবে জেলায় ৩০০টি সৌর বিদ্যুৎ চালিত গ্রামীণ জলপ্রকল্প তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান বলেন, ‘‘জেলার গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দাদের পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করতে সৌর বিদ্যুৎ চালিত প্রকল্প গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
ব্যয় সঙ্কোচের কথা ভেবেই এই পরিকল্পনা। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (জনস্বাস্থ্য) পার্থপ্রতিম দাস বলেন, ‘‘জল সরবরাহ প্রকল্প চালু রাখতে বিদ্যুৎ প্রয়োজন। বিদ্যুতের খরচ জোগান দেওয়া মুশকিল। গ্রামবাসীর থেকে বিদ্যুৎ খরচের টাকা নিলে সমস্যা হতে পারে। তাই সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিকল্পনা।’’ পার্থপ্রতিমবাবুর মতে, এর ফলে প্রাথমিকভাবে প্রকল্প খরচ একটু বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুতের খরচ সাশ্রয় হবে। তমলুক, পাঁশকুড়া, কাঁথি, এগরা, হলদিয়া— জেলার পাঁচ পুরসভাতেই পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প রয়েছে। তবে সেখানে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের ভাবনা হয়নি। জেলার বহু বিদ্যালয়ে বিদ্যুতের খরচ বাঁচাতে সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে। তমলুকের ধলহারা বাজারের মতো কিছু বাজার এলাকায় সৌর বিদ্যুৎ চালিত পথবাতিও বসানো হয়েছে। এ বার গ্রামে পানীয় জল সরবরাহেও সৌর বিদ্যুতেই আস্থা রাখছে প্রশাসন।
মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে প্রতি বাড়িতে শৌচাগার গড়ে ‘নির্মল জেলা’র স্বীকৃতি পেয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। সেই বাবদ পাওয়া অর্থ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা দিয়ে সৌর বিদ্যুৎ চালিত জল সরবরাহ প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিমবাবু জানান, প্রতি জলপ্রকল্প তৈরি করতে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা করে খরচ হবে। জেলার ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ন্যূনতম একটি করে জেলায় মোট ৩০০টি প্রকল্প গড়তে ব্লক পিছু অর্থও বরাদ্দ করা হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার গ্রামীণ এলাকায় পানীয় জলের প্রধান উৎস এখনও নলকূপ। কিছু এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প রয়েছে। গত কয়েক বছরে সাব-মার্সিবল পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তোলার প্রবণতা বেড়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অধীন জল সরবরাহ প্রকল্পগুলি পরিচালনার দ্বায়িত্বে রয়েছে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত। কিন্তু এর বাইরেও জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় এখনও পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। সেই এলাকাগুলি চিহ্নিত করেই সৌর বিদ্যুৎ চালিত ক্ষুদ্র জল সরবরাহ প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা পরিষদ।
ঠিক হয়েছে, একশোটি পরিবার আছে এমন এলাকায় জল সরবরাহ প্রকল্প তৈরি করা হবে। ভূগর্ভস্থ জল তুলতে পাম্প হাউসতৈরির পাশাপাশি পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগদেওয়া হবে। ভূগর্ভস্থ জল তুলতে সাব-মার্সিবল পাম্প চালাতে ব্যবহার হবে সৌর বিদ্যুৎ।