ঝাড়গ্রামের কদমকানন আদিবাসী পাড়ার জলের অপেক্ষায়।
দিনে চাহিদা প্রায় ৬ লক্ষ গ্যালনের। অথচ সরবরাহ করা হয় মাত্র আড়াই লক্ষ গ্যালন পানীয় জল। ছবিটা ঝাড়গ্রাম পুর-শহরের।
কিছু দিনের মধ্যেই নতুন জেলা হতে চলেছে ঝাড়গ্রাম। তখন অরণ্যশহর হবে জেলা সদর। কিন্তু পুর-পরিষেবায় ঘাটতির এই ছবি বদলাবে কী, প্রশ্ন উঠছে এখনই।
তিন দশক পার করে ফেলা ১৮টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট ঝাড়গ্রাম পুরসভায় পর্যাপ্ত পানীয় জল সরবরাহ করার মতো পরিকাঠামোই নেই। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহযোগিতায় একাধিক ডিপ টিউবওয়েল ও মিনি ডিপ টিউওয়েলে জল তুলে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় পুরসভার ৯৬০টি টাইম কলের মাধ্যমে জল সরবরাহের পরেও প্রতিদিন শহরে সাড়ে তিন লক্ষ গ্যালন জলের ঘাটতি থাকে। গরমে একাধিক ডিপ টিউবওয়েল অকেজো হয়ে গিয়ে জল-সঙ্কট তীব্র হয়ে ওঠে। অভিযোগ, শহরের যত্রতত্র ব্যক্তিগত উদ্যোগেও গভীর নলকূপ হওয়ায় ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে গিয়েছে বহুগুণ। তার উপর শহরে যথেচ্ছ বহুতল তৈরি হওয়ায় জলের ব্যবহার ও চাহিদা বাড়ছে। পুরসভার পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে ঝাড়গ্রাম শহরে প্রায় ৬৩ হাজার মানুষের বাস। পরিবার রয়েছে ১৭ হাজার। আর দোকানপাট ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজার। এদের সকলের জন্য পর্যাপ্ত জল সরবরাহে কার্যত ব্যর্থ ‘ডি’ ক্যাটাগরির পুরসভা ঝাড়গ্রাম।
জল পড়ে নষ্ট হয় এ ভাবেই।
বাছুরডোবায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
জল সরবরাহ নিয়ে পুরসভা ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে পুরবাসীর। শহরের এক একটি এলাকার মধ্যে উচ্চতার তারতম্য গড়ে ৫০ থেকে ১০০ ফুট। এ জন্য শহরে রাস্তার ধারে হাজার খানের টাইম কল থাকলেও সব গুলিতে জল পড়ে না। কোথাও মাঝারি কোথায় সুতোর মতো জল পড়ে। বেশ কিছু কল আবার অকেজো হয়ে গিয়েছে। আবার কিছু কলের একাংশ ভাঙা থাকায় সরবরাহের সময়ে জলে ভেসে যায় রাস্তা। জলের অপচয় রোখা যায় না।
সমস্যা মেটাতে নদী ভিত্তিক একটি বড় জল প্রকল্প রূপায়ণে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের পুর বিষয়ক দফতর। পুরসভা সূত্রের খবর, প্রায় একশো কোটি টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্প রূপায়িত হতে বছর তিনেক লাগবে। তবে তার অনেক আগেই জেলা সদরে উন্নীত হয়ে যাচ্ছে শহর ঝাড়গ্রাম। তখন জনবসতি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বাড়বে। ফলে, জল-যন্ত্রণা বাড়বে বলেই আশঙ্কা। তা ছাড়া, বিগত বাম পুরবোর্ডও অজস্রবার নদী ভিত্তিক জল প্রকল্পের আশ্বাস দিয়েছিল। তবে কাজের কাজ হয়নি। ২০১৩ সালে একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূলের পুরবোর্ড। পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেবের অবশ্য দাবি, দু’বছরের মধ্যেই শহরে বাড়ি-বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হবে। এ জন্য পুরবিষয়ক দফতর ৯৫ কোটি টাকার প্রকল্প মঞ্জুর করেছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। দুর্গেশবাবুর কথায়, ‘‘আগামী দিনে শহরে জনসংখ্যা বাড়বে। সে জন্য আড়াই লক্ষ মানুষের চাহিদা পূরণের ক্ষমতা সম্পন্ন জল প্রকল্পটি রূপায়িত করা হবে।’’
ঝাড়গ্রাম পুরসভা সূত্রের খবর, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ৮ কিমি দূরের লালগড়ের বৈতায় কংসাবতী নদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল এনে রাধানগরে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পরিশোধন করে ঝাড়গ্রাম শহরে জল সরবরাহ করা হবে। শহরের মধ্যে ২১ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে পাইপ লাইন বসানো হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সমীক্ষার পরে রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতর সবুজ সংকেত দিয়েছে। রাজ্য পুর-কারিগরি দফতরের সহযোগিতায় প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। পুরপ্রধান দুর্গেশবাবুর আশ্বাস, প্রকল্প রূপায়িত হলে শহরে কোথাও জলের ঘাটতি থাকবে না।
প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ সরকারের অবশ্য কটাক্ষ, “ঝাড়গ্রাম শহর জেলা সদর হতে চলেছে। জল প্রকল্পের আশ্বাসে তো আর তেষ্টা মিটবে না। বাড়ি-বাড়ি কবে জল পৌঁছয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।” (চলবে)