পুর-পথে: ঘাটালশহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চলছে ডিঙি। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
কোথাও এক কোমর সমান জল। কোথাও আবার পর্যন্ত। দিন দুয়েক ধরেই জল ঢুকছিল ঘাটাল শহরে। রবিবার জলস্তর বেড়ে জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এ দিন দুপুরে আবার শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে একটি স্লুইস গেট দিয়ে হু হু করে জল ঢুকে পড়ে। স্থানীয়রাই তড়িঘড়ি বালির বস্তা দিয়ে সেই জল কোনও মতে আটকেছেন। জলমগ্ন ঘাটালের এখন যা পরিস্থিতি তাতে শহরের একাংশে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। নদীর জল উপচে প্লাবিত হয়েছে ঘাটাল ও দাসপুরের বহু গ্রামও। দাসপুরের কল্যাণপুরে শিলাবতী নদীর জলে তলিয়ে গিয়েছেন এক যুবক। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন এক পড়শির দেহ সৎকার করার পথে ফেরার সময় কল্যাণপুরে শিলাবতীতে স্নান করতে নেমেছিলেন বছর ছেচল্লিশের সুকুমার পাত্র। তখনই তলিয়ে যা তিনি। সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁর খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে প্রশাসন।
এই পরিস্থিতিতে নতুন করে নিম্নচাপ ঘনীভূত হওয়ার খবরে প্রশাসনের উদ্বেগ বেড়েছে। ঘাটালের মহকুমাশাসক অসীম পাল বলেন, “ঘাটাল শহরের একাংশ প্লাবিত হয়েছে। শহরে নৌকায় যাতায়াত শুরু হয়েছে। ঘাটাল ও দাসপুরের বেশ কিছু গ্রামও প্লাবিত হয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে। প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।” বিপদ এড়াতে ঘাটাল, দাসপুরের নদী-বাঁধগুলিতে সবর্ক্ষণ নজরদারি শুরু করেছে সেচ দফতর। সেচ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “শিলাবতী, কংসাবতী-সহ সব নদীই ফুঁসছে। সোমবার থেকে ফের নিম্নচাপের বৃষ্টি শুরু হলে বিপদ বাড়বে।”
ঘাটাল পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিন শহরের ১২টি ওয়ার্ডের সব পাকা রাস্তা ডুবে গিয়েছে। নিচু এলাকাগুলিতে ঘর-বাড়ি-দোকানে জল ঢুকেছে। পানীয় জলের ট্যাপগুলিও ডুবে গিয়েছে। শহরে আড়গোড়া, শুকচন্দ্রপুর, গড়প্রতাপনগর, গম্ভীরনগর, চাউলি, সিংহপুর, পাঁচঘোড়া প্রভৃতি এলাকার রাস্তায় কোমর সমান জল। এ দিন নৌকায় করে উঁচু এলাকায় এসে পানীয় জল সংগ্রহ করেন পুর এলাকার বহু বাসিন্দা। ঘাটাল শহরের অনুকূল মন্দির লাগোয়া স্লুইস গেট দিয়ে এ দিন জল ঢুকতে শুরু করে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই হুলুস্থূল পড়ে যায় শহরে। চলে আসেন মহকুমাশাসক ও বিধায়ক শঙ্কর দোলই। ঘাটাল থানার ওসি-সহ পুলিশের জলও পৌঁছয়। শেষে স্থানীয়দের চেষ্টায় গেট ফেলে এবং বালির বস্তা দিয়ে জল আটকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বন্যাপ্রবণ ঘাটালে জলমগ্ন হওয়ার এই ছবি নতুন নয়। তবে এ বার করোনায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় অবস্থা জটিল হয়েছে। নৌকাও অপ্রতুল। ফলে, জলমগ্ন এলাকায় সামাজিক দূরত্ব-সহ অন্য করোনা বিধি শিকেয় উঠছে।
শনিবার থেকেই বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছিল শিলাবতী, কংসাবতীর জল। জলস্তর বাড়ছিল ঝুমি নদীরও। রবিবার সকাল থেকেই হু হু করে জল ঢুকে পড়ে ঘাটাল-দাসপুরের গ্রাম গুলিতে। রাস্তাঘাট, ধানজমি সবই চলে যায় জলের তলায়। ঘাটালের মনসুকা, দেওয়ানচক, আজবনগর, মোহনপুর-সহ বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩০-৩৫টি গ্রামও জলের তলায়। রবিবার দাসপুর-১ ব্লকের শিলাবতী নদীর জল ঢুকে স্থানীয় রাজনগর, হোসেনপুর, বাজরাকুন্ডু, নাড়াজোল-সহ লাগোয়া বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেখানেও নৌকায় যাতায়াত শুরু হয়েছে।