কমছে জল, রোগের ওষুধের জন্য হাহাকার

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, দাসপুর-২ ব্লকে মোট ৩৪টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ২৩টি জলে ডুবে গিয়েছিল। এর মধ্যে ১১টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জল সরে গিয়েছে। গত সোমবার থেকে সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা চালু হয়েছে। কিন্তু এখনও ১২টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডুবে রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৭ ০৭:১০
Share:

জলমগ্ন: দাসপুরের মদপুকুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

কোথাও কোথাও জল সরেছে। আর জল নামার সঙ্গে সঙ্গেই লাফিয়ে বাড়ছে ডায়েরিয়ার মতো পেটের নানা অসুখ। ছড়াচ্ছে চর্মরোগও। সর্দি-জ্বর হলেও ডাক্তার দেখানোর উপায় নেই। কারণ এখনও বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্র জলের তলায়। দুর্গতদের দাবি, গ্রামে গ্রামে শিবির করে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করুক স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

ঘাটাল মহকুমার দাসপুরের বহু এলাকা এখনও জলমগ্ন। ওই সব এলাকার হাজার হাজার মানুষ কার্যত ঘরবন্দি। জলের দখলে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলিও। ফলে চিকিৎসা পরিষেবা শিকেয়। এদিকে কিছু এলাকায় জল নামার পর ডায়েরিয়া-সহ জ্বর-সর্দিতে অনেকেই আক্রান্ত। ভুগছেন চর্মরোগেও। পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নেমেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর। গত সোমবার থেকেই জেলা স্বাস্থ্য দফতর দাসপুর-২ নম্বর ব্লক জুড়ে মেডিক্যাল ক্যাম্প করে অস্থায়ী ভাবে চিকিৎসা পরিষেবা চালুও করেছে। কিন্তু শিবিরের সংখ্যা চাহিদার তুলনাই কম। ফলে ক্ষোভে ফুঁসছেন অসুস্থরা।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, দাসপুর-২ ব্লকে মোট ৩৪টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ২৩টি জলে ডুবে গিয়েছিল। এর মধ্যে ১১টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জল সরে গিয়েছে। গত সোমবার থেকে সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা চালু হয়েছে। কিন্তু এখনও ১২টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডুবে রয়েছে। তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে এখনও নিশ্চিন্তিপুর ও চাঁইপাট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র জলের তলায়।

Advertisement

সূত্রের খবর, যে সব এলাকায় অল্প জল রয়েছে, সেই সব গ্রামগুলিতেই মেডিক্যাল ক্যাম্পের বন্দোবস্ত করেছে স্বাস্থ্য দফতর। দুর্গতদের ক্ষোভ, কুড়ি দিন ধরে বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা। অথচ হুঁশ নেই কারও। পাশাপাশি সরকারি ভাবে গ্রামে কোনও স্বাস্থ্যশিবিরও খোলা হয়নি। গ্রামের একপ্রান্তে শিবির করেই দায় এড়াচ্ছে স্বাস্থ্য প্রশাসন। এমনকী এর জন্য প্রচারও হয়নি। এই অবস্থায় তাঁরা যাবেন কোথায়? তাঁদের আরও অভিযোগ, জল নামার পর এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে। পচা-দুর্গন্ধে বাড়িতেও থাকা যাচ্ছে না। এলাকায় ছড়ানো হয়নি ব্লিচিং পাউডার, কীটনাশক বা স্প্রেও।

পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরার দাবি, “আমরা প্রতি গ্রামেই শিবির করতে উদ্যোগী হয়েছি। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতেও সাময়িক ভাবে বাড়তি চিকিৎসক-নার্স পাঠানো হয়েছে।” পর্যাপ্ত ওষুধের পাশাপাশি ব্লিচিং পাউডার, হ্যালোজেন ট্যাবলেটও বিলি করা হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, জল কমায় এখন নৌকায় করে গ্রামগুলিতে ঘোরার পরিস্থিতি নেই। যেখানে জল বেশি সেখানে নৌকাতেই শিবির চালু করা হয়েছে। বাকি এলাকায় স্কুল বা পঞ্চায়েত অফিসে শিবির খোলা হয়েছে। এর জন্য মাইকে প্রচারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

জেলার উপ-মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “প্রতিদিন ক্যাম্পগুলিতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছেন। বেশিরভাগই ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত। যাঁদের অবস্থা গুরুতর তাঁদের সোনাখালি গ্রামীণ বা ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে। জ্বরে আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।” যদিও এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘পরিস্থিতি যা, তাতে প্রতি বুথে শিবির করা জরুরি। দিনদিন আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। অসু্স্থদের তো জল পেরিয়ে শিবিরে আসা সম্ভব নয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement