ফের ভোটের পর জল বন্ধ, অভিযোগ শাসকের বিরুদ্ধে

ভোটের পর ফের জল বন্ধের অভিযোগ। ফের অভিযুক্ত শাসক দল।রাজ্যে প্রথম দফা নির্বাচনের পরেই ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি এলাকায় নলকূপে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের পরের দিনই এক আদিবাসী গ্রামের জল সংযোগ কেটে অভিযোগ উঠল।

Advertisement

অমিত করমহাপাত্র

দাঁতন শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৫৭
Share:

পূর্বপাড়ায় প্রতিরোধে পাহারা। নিজস্ব চিত্র।

ভোটের পর ফের জল বন্ধের অভিযোগ। ফের অভিযুক্ত শাসক দল।

Advertisement

রাজ্যে প্রথম দফা নির্বাচনের পরেই ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি এলাকায় নলকূপে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের পরের দিনই এক আদিবাসী গ্রামের জল সংযোগ কেটে অভিযোগ উঠল।

দাঁতন-২ ব্লকের তুরকা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কুসুমদা গ্রামের পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ায় প্রায় চার দশক ধরে পাট্টা জমিতে বসবাস করছেন বেশ কয়েকটি আদিবাসী পরিবার। তাঁরা সিপিএম সমর্থক বলে পরিচিত। পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন সোমবার ভোটের পর থেকেই শুরু হয়েছিল হুমকি। মঙ্গলবার সকালে মাটি খুঁড়ে সজলধারা প্রকল্পের জলের লাইন কেটে দেয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এ বিষয়ে বুধবার বিডিও-র কাছে অভিযোগ করেছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা রামহরি হেমব্রম।

Advertisement

পশ্চিম পাড়ারই গৌরহরি হেমব্রম, বাপি মুর্মুরা বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ রাস্তা খুঁড়ে সজলধারা প্রকল্পের জলের পাইপ লাইন কেটে দেয়। আমরা হাতজোড় করে আপত্তি করেছিলাম, কিন্তু ওরা শোনেনি। বরং, বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। যে খাস পুকুরে আমরা মাছ চাষ করি, তার জল বের করে দেওয়ার কথা বলে ধমকে গিয়েছে।” পশ্চিম পাড়ায় একটি মাত্র নলকূপ রয়েছে। অভিযোগ সেই জলও পানের অযোগ্য। ভরসা ছিল সজলধারার জলই। গত সাত বছর ধরে ওই জলই ব্যবহার করতেই অভ্যস্ত মালতী হেমব্রম, বুধু হেমব্রমরা। মঙ্গলবার থেকে সে জল বন্ধ। বাধ্য হয়েই নলকূপের জল খেতে হচ্ছে তাঁদের।

পূর্ব পাড়ায় দশটি পরিবারের বাস, সদস্য সংখ্যা ৫৭। পুরুষরা ভয় পাচ্ছেন, এলাকার বাইরে বেরোলেই মারধর করবে তৃণমূলের লোকেরা। ফলে কাজ বন্ধ। স্থানীয় যুবক চৈতন্য মুর্মু এ বার ভোটে সিপিআই প্রার্থী শিশির পাত্রর পোলিং এজেন্ট ছিলেন। তিনি বলেন, “মাঠে ধান পড়ে রয়েছে, আমরা যেতে পারছি না। বাজার হাট বন্ধ। পাড়ার সকলেই আতঙ্কে আছি।” সিপিএমের দাঁতন-২ জোনাল কমিটির সম্পাদক রতন দে-র অভিযোগ, “গত তিনটি ভোটে ভোট লুঠ করেছিল তৃণমূল। এ বার পারেনি। তাই প্রতিহিংসায় তারা জলের লাইন কেটে দিয়েছে। প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু, কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”

তবে শাসক দলকে ভোট না-দেওয়ার জল সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে বলে মানতে চাইছেন না স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা অঞ্জু ভুঁইয়া। তিনি দাবি করেন, ‘‘ওই জায়গায় পাইপলাইনের সমস্যা ছিল। তাই কেটে রাখা হয়েছে। কয়েকদিন পরেই ঠিক করে দেওয়া হবে।’’ বিডিও রুনু রায়ের প্রতিক্রিয়া, “ঘটনাটি কেন কী ভাবে হয়েছে জানি না। পুলিশকে দিয়ে অভিযোগের তদন্ত করা হবে। তবে আগে ওই পাইপলাইন যুক্ত করে মানুষকে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।” দাঁতন থানার আইসি প্রেমাশিস চট্টরাজ জানান, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ কানাইলাল মহাপাত্র অবশ্য দায় এড়িয়েছেন, “বিষয়টি নজরে নেই। আমার কাছে অভিযোগ এলে দেখব।”

শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য নস্যাৎ করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা, দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ দায় ঝেড়ে বলেন, “সিপিএমই পরিকল্পনা মাফিক অপপ্রচার করে সহানুভূতি কুড়োতে চাইছে। প্রশাসনিক তদন্তে সঠিক তথ্যই উঠে আসবে।”

যদিও এ তথ্য মানতে নারাজ স্থানীয় বাসিন্দারা। গৌরহরি হেমব্রম বলেন, “গত তিনটি ভোট কিন্তু আমরা তৃণমূলকেই দিয়েছিলাম। কিন্তু ওই জলের কলটি ছাড়া আর কিছুই পাইনি। এ বার ভোটের আগে ওরা আমাদের পাড়ায় একবারও আসেনি।’’ কিন্তু গ্রামে এসেছিলেন সিপিআই প্রার্থী। গৌরহরিরা জানান, তাই শিশির পাত্রর মিছিলেও হেঁটেছিলেন তাঁরা। তারপর থেকেই হুমকি শুরু হয়। বাপি মুর্মু বলেন, “ভোটের আগে বিডিও আর পুলিশ এসে ফোন নম্বর দিয়ে বলেছিলেন সমস্যা হলে জানাতে। জলের লাইন কাটার পর কয়েকবার ফোন করেছি। কেউ ধরেননি।”

পশ্চিম পাড়ার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছে পাশের পূর্ব পাড়া। তাঁদের উপলব্ধি, লোকবলের অভাব ছিল বলেই ঘটনোর সময় প্রতিরোধ করা যায়নি। তাই পূর্ব পাড়ার মানুষ আগেই প্রতিরোধ গড়েছেন। ওই এলাকায় প্রায় ৪৫ টি পরিবারের বাস। বুধবার পূর্ব পাড়ায় ঢোকার মুখে দেখা গেল যুবক থেকে বৃদ্ধ, নির্বিশেষে বহু মানুষ লাঠি হাতে পাহারা দিচ্ছেন।

প্রশ্ন করতেই লক্ষ্মণ মুর্মু বলেন, “পালা করে দিনভর পাহারা দিচ্ছি। পশ্চিম পাড়ায় জলের লাইন কেটে দিয়ে গিয়েছে তৃণমূলের লোকজন। আমাদের পাড়াতেও আসছিল। কিন্তু আমাদের লোক জড়ো হতেই ওরা পালিয়েছে।” লক্ষ্মণবাবুর অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালে তিনি কুসুমদা বাজারে গেলে তাঁকে মারধর করে তৃণমূল। ভয়ে তিনি পালিয়ে আসেন। বৃদ্ধা গঙ্গা হাঁসদা জানান, পাড়ায় দু’টি নলকূপের একটি অকেজো। পঞ্চায়েত থেকে বসানো অন্য নলকূপটির জল পানের অযোগ্য। তাঁর আশঙ্কা, এই গরমে পানীয় জল বন্ধ হয়ে গেলে পাড়ার দু’শোরও বেশি মানুষ বেঘোরে মারা পড়বে। তাই সবাই মিলে জোট করে টিকিয়ে রাখছে সজলধারা প্রকল্পের জলের পাইপ লাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement