West Bengal Panchayat Election 2023

বিনা যুদ্ধে জয় নয়, টক্কর চায় জনতা

পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল বনাম বিরোধী বিজেপি, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস সহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের লড়াই হচ্ছে।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ ০৭:২৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

দুয়ারে ভোট। তবুও ভোট নেই!

Advertisement

পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল বনাম বিরোধী বিজেপি, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস সহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের লড়াই হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ৪২৯০ টি গ্রামপঞ্চায়েতের আসন ও ৬৬৫ টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে ও ৭০ টি জেলাপরিষদের আসনে লড়াই হচ্ছে । কিন্তু আগামী ৮ জুলাই ভোট গ্রহণের আগেই জেলার বিভিন্ন ব্লকে মোট ৬২টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন ও ২ টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনের ফল ইতিমধ্যেই নির্ধারিত। ওই ৬২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে মাত্র একজন করে প্রার্থী থাকায় তাঁদের জয় নিশ্চিত হয়েছে। যা দেখে হতাশাই প্রকাশ করেছেন ভোটারদের অনেকে।

তমলুক মহকুমায় ময়না ব্লকের তিলখোজা গ্রামপঞ্চায়েতের একটি গ্রামপঞ্চায়েত আসন, নন্দকুমার ব্লকের বরগোদাগোদার গ্রামপঞ্চায়েতের একটি আসন এবং কোলাঘাট ব্লকের কোলা-২ গ্রামপঞ্চায়েতে একটি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়েছে। তিনটিতেই জয় নিশ্চিত হয়েছে তৃণমূল প্রার্থীদের। ফলে ওই পঞ্চায়েত আসনে মতামত জানানোর সুযোগ থেকে ভোটাররা বঞ্চিতই রইলেন।

Advertisement

বরগোদাগোদার গ্রামপঞ্চায়েতে বরগোদাগোদার গ্রামে ২১ নম্বর আসনে বিনা লড়াইয়েই জয় নিশ্চিত হয়েছে তৃণমূল প্রার্থী গণেশ বর্মনের। স্থানীয় সূত্রের খবর, ২১ নম্বর আসনে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন দলের জেলা কমিটির সদস্য রামপদ হাজরা। যদিও রামপদ জেলাপরিষদের আসনেও আগে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী রামপদর পঞ্চায়েতের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। আর দলের নির্দেশে জেলাপরিষদ আসনে প্রার্থী পদ থেকেও মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রামপদ। ফলে ২১ নম্বর আসনে অন্য কোনও প্রার্থীর মনোনয়ন না থাকায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিশ্চিত হয়েছে তৃণমূল প্রার্থীর।

বরগোদাগোদার গ্রামের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা ২৮ বছরের গণেশ এবারই প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। আর প্রথমবারেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিশ্চিত হওয়ায় বেজায় খুশি তিনি। জয় নিশ্চিত হওয়ার পরেও তৃণমূলের দেওয়াল লিখন ও ব্যানারে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলাপরিষদের প্রার্থীদের নামের সাথেই গণেশের নাম করে তাঁকে জয়ী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকেই এভাবে বিনাযুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থীর জয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, ভোট মানে গণতন্ত্রের উৎসব। আর মানুষকে নিয়েই গণতন্ত্র। নির্বাচন কমিশন এমনটাই বলে। অথচ সেই উৎসবেই অধিকাংশ মানুষ অংশ নিতে পারে না। ফলে প্রশ্ন থেকেই যায়। রাজনৈতিক দলগুলিও এর দায় এড়াতে পারে না।

গ্রামের বাসিন্দা প্রণব প্রামাণিক বলেন, ’’এবারের পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের বুথে দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন রয়েছে। ফলে দু’জনকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেতাম। কিন্তু ভোটের আগেই একজন প্রার্থী জিতে গিয়েছেন। ভোট দানের মাধ্যমে জয় লাভ হলে ভাল হত। এখানে তো আমার মতামতের কোনও মূল্যই থাকল না।’’ স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধ ধরণীধর বর্মন বলেন,’’আমরা এবার গ্রামপঞ্চায়েতের দু’টি আসনে দু’জন প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম । কিন্তু সেই সুযোগ হাতছাড়া হল। আমাদের জন্যই তো ভোট। তাই ভোটটা দিতে পারলে ভাল লাগত। তবে যেই জিতুক গ্রামের উন্নয়নে কাজ করবে আশা করছি।’’

তবে ২০ নম্বর আসনে বিজেপি প্রার্থী তথা বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য দেবেন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, ’’গত বিধানসভার ভোটে এই বুথে আমরা তৃণমূলের চেয়ে এগিয়েছিলাম। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে পঞ্চায়েতে দু’টি আসনেই মনোনয়ন জমা দিয়েছিলাম। এক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় একটি আসনের প্রার্থী নেই। তবে একটি পঞ্চায়েত আসনে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে আমি লড়াই করছি।’’ তাঁর মতে, বিনা লড়াইয়ে জয়ে ভোটারদেরই বঞ্চনা করা হয়। তাই যে কোনও আসনেই তু্ল্যমূল্য লড়াই হওয়া উচিত।

তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী উপ-প্রধান বাদল মণ্ডল বলেন, ’’পঞ্চায়েতে একটি আসনে বিজেপি ছাড়া অন্য কোনও দল প্রার্থী দিতে পারেনি। আমাদের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন। পঞ্চায়েতের বাকি আসন সহ পঞ্চায়েত সমিতি, জেলাপরিষদেও আমরাই জয়লাভ করব।’’ তাঁর মতে, তৃণমূল দল ভোটারদের অধিকারকে সম্মান করে। কিন্তু বিরোধীদের সাংগঠনিক দক্ষতার অভাবেই তারা প্রার্থী দিতে পারে না। সে ক্ষেত্রে তাঁদের কিছু করণীয় নেই। (চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement