বিক্ষোভের মুখে বন দফতরের আধিকারিক ও কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।
জমি দখল নিয়ে বন দফতরের সঙ্গে ফের ‘সংঘাত’ সৈকতে! মাস কয়েক আগে বন দফতরের আধিকারিকের সঙ্গে এমনই এক ‘সংঘাতে’ জড়িয়ে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি। এবার কোনও রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ঝামেলায় জড়াননি, বরং বন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বচসায় জড়ান মৎস্যজীবীরা।
বগুড়ান জলপাই (দু’নম্বর) খটিতে মৎস্যজীবীদের জন্য একটি শৌচালয় নির্মাণ হচ্ছে। মাস দুয়েক ধরে মৎস্য দফতরের উদ্যোগে ওই কাজ চলছে। অভিযোগ, নিজেদের জমি হিসেবে দাবি করে গত সপ্তাহে ওই শৌচালয় তৈরির কাজ বন্ধ করে দেয় বন দফতর। বুধবার পুনরায় সেখানে শৌচালয় নির্মাণের কাজ শুরু করে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা। খবর পেয়ে পৌঁছে যান জুনপুট বিট অফিসের আধিকারিক এবং বন দফতরের কর্মীরা। তাঁরা কাজ বন্ধ করে দেন। পাল্টা জমায়েত শুরু করেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। তাঁরা মৎস্যজীবীদের সঙ্গে বন দফতরের কর্মীদের বচসা শুরু করেন।
বন দফতরের দাবি, উপকূল এলাকায় তাদের জমি দখল করে খটি চলছে।এ দিন পূর্ণিমা বর্মন নামে এক মৎস্যজীবী বলেন, ‘‘বন দফতরের আধিকারিকেরা যদি সৈকতে উন্মুক্ত জায়গায় শৌচকর্ম করতে পারেন, তাহলে আমাদের আপত্তি নেই।’’ এ দিন বাধা পেয়ে বন দফতরের আধিকারিকেরা এলাকা ছেড়ে চলে যান। তবে তাঁরা এলাকায় পরে নজরদারি চালাচ্ছেন। নতুন করে যাতে অশান্তি না ছড়ায়, সে জন্য সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুমন সাহা আপাতত কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন।
ওই মৎস্য খটির কর্মকর্তা দেবব্রত খুটিয়া বলেন, ‘‘২০০১ সালে মৎস্যজীবীদের জন্য খটিতে শৌচালয় তৈরি করেছিল মৎস্য দফতর। সেটি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বলে নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রথমবার বাধা পেয়ে কাঁথির রেঞ্জর মনীষা সাউয়ের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন মৎস্যজীবীদের স্বার্থে শৌচালয় নির্মাণের বিষয়ে মানবিক হবেন। তারপরও কোনও কিছুই বলেননি।’’ এ ব্যাপারে রেঞ্জার মনীষা সাউয়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।
অগস্টে তাজপুরে বন দফতরের জমিতে বেআইনিভাবে বসা হকারদের হঠাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৎকালীন কারামন্ত্রী অখিল গিরির বিরুদ্ধে। তিনি মহিলার রেঞ্জারকে কটূক্তি করেন। এখন শৌচালয়ের কাজ বন্ধ হওয়ায় বন দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষুণ্ণ হয়ে উঠেছে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি। জেলা মৎস্যজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস শ্যামল বলছেন, ‘‘উপকূলে পাঁচ দশক ধরে যে জায়গাতে খটি চলছে, এখন সেটাকেই নিজেদের জমি বলে দাবি করছে বন দফতর। জীববৈচিত্র্য রক্ষার কারণ দেখিয়ে মৎস্যজীবীদের প্রতি অমানবিক আচরণ করছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।" যদিও জেলা বন আধিকারিক সত্যজিৎ রায় জানান, তিনি এমন ঘটনার বিষয়ে জানেন না। খোঁজ নিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন।