সচিত্র পরিচয় পত্রের বিষয়ে প্রচার মৎস্য দফতরের। নিজস্ব চিত্র
লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ লক্ষ। কিন্তু তার অর্ধেকরও কম সংখ্যক মৎস্যজীবী সচিত্র পরিচয় পত্র নেওয়ার জন্য ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে আবেদন জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরে। মৎস্যমন্ত্রীর নিজের জেলায় মৎস্যজীবীদের সচিত্র পরিচয় পত্র বিলির নতুন কর্মসূচির এমনই ছবি সামনে এসেছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গোটা ডিসেম্বর জুড়ে যেমন পরিচয় পত্র পাওয়ার আবেদন প্রক্রিয়া জারি রেখেছে মৎস্য দফতর। তেমনই বিভিন্ন এলাকায় বিষয়ে ফের শুরু হয়েছে প্রচার পর্ব।
গত নভেম্বরে রাজ্যব্যাপী মৎস্যজীবীদের সচিত্র পরিচয় পত্র দেওয়া শুরু করেছে রাজ্য সরকার। ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে এ জন্য আবেদন জানাতে হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাশাপাশি রাজ্যে সবচেয়ে বেশি মৎস্যজীবী রয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরে। তাই এই জেলায় পাঁচ লক্ষ মৎস্যজীবীকে পরিচয় পত্র দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা মৎস্য দফতরকে বেঁধে দেয় রাজ্য সরকার। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুরে দু’লক্ষরও কম আবেদন জমা পড়েছে। জানা গিয়েছে, সমুদ্রে যারা ট্রলার এবং বড় ভটভুটিতে মাছ ধরতে যান, সেই সব মৎস্যজীবীর অধিকাংশ এখনও পর্যন্ত সচিত্র পরিচয় পত্র নেওয়ার জন্য আবেদন জানাতে আগ্রহ দেখাননি। এ ব্যাপারে মৎস্য দফতরের তরফে দাবি করা হয়েছে, সমুদ্রে এখন মাছ ধরার মরসুম চলছে। মৎস্যজীবীরা ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছেন। তাই ওই সব মৎস্যজীবীদের আবেদন পত্র এখনও জমা পড়েনি। আপাতত মৎস্য দফতরের ব্যানারে খটি এবং মৎস্য বন্দরগুলিতে চলছে মাইকে করে প্রচার অভিযান চলছে। সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) জয়ন্ত কুমার প্রধান বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় পাঁচ লক্ষ সচিত্র পরিচয় পত্র দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত এক মাসে দেড় লক্ষের কিছুটা বেশি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। বাকিরা যাতে দ্রুত আবেদন করেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে নতুন করে প্রচার শুরু করেছি।’’
কেন এমন পরিস্থিতি?
মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি সূত্রের খবর, মৎস্যজীবী নন, এমন অনেকে পরিচয় পত্র নেওয়ার জন্য আবেদন করছেন। ফলে নিজেদের পেশাগত পরিচিত অবলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় অনেকে আবেদন করছেন না বলেও মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির দাবি। দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিস শ্যামল বলেন, ‘‘অর্ধেকের বেশি আবেদনকারী প্রকৃত মৎস্যজীবী নন। অতীতে বায়োমেট্রিক পরিচয় পত্র এবং পিভিসি কার্ড দেওয়া হয়েছিল মৎস্যজীবীদের। তারপরেও কেন এই কার্ড!’’
গোটা বিষয়টিকে ভাঁওতাবাজি বলে কটাক্ষ করেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি অসীম মিশ্র বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের কী পরিস্থিতি, তা রাজ্যেবাসী বুঝে গিয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে মৎস্যজীবীদের এই সচিত্র পরিচয় পত্র নিয়ে নতুন নাটক করতে চাইছে শাসক দল। তাই প্রকৃত মৎস্যজীবীরা আবেদন করছেন না।’’ নিজের জেলায় পরিচয় পত্র নিয়ে মৎস্যজীবীদের উৎসাহ কম প্রসঙ্গে মৎস্য প্রতিমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘শুধু পূর্ব মেদিনীপুর নয়, আরও কিছু কিছু জায়গায় মৎস্যজীবীদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাই এখনও আবেদনের সংখ্যা কম। আমরা দফতরের আধিকারিক এবং কর্মীদের নিয়ে যেভাবে সব জায়গাতে প্রচার চালাচ্ছি, তাতে দ্রুত আবেদনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী।’’