Jungle Mahals

বিপদ বাড়াচ্ছে হাতির পথে হোম স্টে

ঝাড়গ্রাম জেলায় হোম স্টে-র সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। সম্প্রতি জেলা সফরে এসে পর্যটন প্রসারে আরও বেশি হোম স্টে তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৩০
Share:

অদূরেই রাস্তা পেরোয় হাতির দল। বেলপাহাড়িতে জঙ্গল ও প্রাকৃতিক খালের মাঝেই তৈরি হয়েছে রিসর্ট। নিজস্ব চিত্র

জঙ্গলমহলে হাতির যাতায়াতের পথেই মাথা তুলছে একের পর এক হোম স্টে ও ভিলেজ রিসর্ট। আর তাতেই হাতি-মানুষ সংঘাতের আশঙ্কা আরও বাড়ছে।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম জেলায় হোম স্টে-র সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। সম্প্রতি জেলা সফরে এসে পর্যটন প্রসারে আরও বেশি হোম স্টে তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। এরপরে কলকাতার বিভিন্ন সংস্থাও এখানে হোম স্টে-তে বিনিয়োগ করছে। তবে অভিযোগ, বেশিরভাগ হোম স্টে ও ভিলেজ রিসর্টই নিয়ম ভেঙে হাতির গতিপথে গড়ে উঠছে। জঙ্গলের মধ্যে অপরিকল্পিত ভাবে রায়তি জমিতে যত্রতত্র নির্মাণ হচ্ছে। ঝাড়গ্রাম ও বেলপাহাড়ি ব্লকে এমন রিসর্ট ও হোম স্টে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে।

বন দফতর সূত্রে খবর, মূলত পঞ্চায়েত স্তরে অনুমতি ও ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে গ্রামীণ এলাকায় হোম স্টে বা ভিলেজ রিসর্টগুলি তৈরি হচ্ছে। রায়তি জমিতে তৈরি হওয়ায় এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু করণীয় নেই। বনকর্মীদের একাংশের মতে, উত্তরবঙ্গে হাতির করিডরগুলিতে একটানা মাইলের পর মাইল জঙ্গল রয়েছে। কিন্তু ঝাড়গ্রামে বহু আগেই থেকেই জঙ্গল এলাকার মাঝে-মাঝে জনপদ গড়ে উঠেছে। ঝাড়গ্রাম জেলা হওয়ার পরে অনেক জায়গায় জনবসতি জঙ্গলে গিয়ে ঠেকেছে। এতে হাতির গতিপথের পরিধি এমনিতেই সঙ্কুচিত হচ্ছে। তারপরে এমন অপরিকল্পিত হোম স্টে-র জেরে নতুন করে বাধা তৈরি হচ্ছে। হাতির হানায় ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যু বাড়ছে।

Advertisement

বিষয়টি উদ্বিগ্ন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ থেকে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত লোকজনও। প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমদার বলছেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম ও বেলপাহাড়ির জঙ্গলের মাঝে মাঝে জনবসতির সঙ্গে অপরিকল্পিতভাবে হোম স্টে ও রিসর্ট গড়ে উঠেছে। জঙ্গলের মাঝেই তৈরি হয়েছে রাস্তা। এতে হাতিরা স্বাভাবিক পথ হারিয়ে ফেলছে। বিপদ ঘটছে।’’ রিসর্ট ও হোম স্টে তৈরির ক্ষেত্রে আলাদা আইন হওয়া দরকার, মনে করেন তিনি। ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন ডিএফও বিজনবিহারী মজুমদারের ব্যাখ্যা, ‘‘জঙ্গলের পরিসর কমে যাওয়ায় হাতিরা এখন বিপন্ন। তাই প্রত্যাঘাত করছে এবং মৃত্যু বাড়ছে। এখন আবার জঙ্গল এলাকায় রিসর্ট ও হোম স্টে হচ্ছে। এতে বন্যপ্রাণীদের স্বাভাবিক বিচরণ ক্ষেত্রটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’

পর্যটন দফতর স্বীকৃত ঝাড়গ্রাম টুরিজ়ম-এর কর্তা সুমিত দত্তও বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে প্রচুর হোম স্টে গড়ে উঠছে। যার বেশিরভাগই জঙ্গল লাগোয়া এলাকায়। এলাকাবাসী ও পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে অতি দ্রুত মাস্টার প্ল্যান তৈরি প্রয়োজন।’’ বন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার আশ্বাস, ‘‘হাতির সমস্যা মেটাতে বিভাগীয় স্তরে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

দু’একটি রিসর্ট ও হোম স্টে কর্তৃপক্ষ হাতি আটকাতে চারপাশে পরিখা খনন করেছেন। কিন্তু সেই কাজ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সবার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। সামনেই পুজোর মরসুম। সেই কথা মাথায় রেখে প্রাক্তন বন কর্তাদের পরামর্শ, সূর্য ডোবার আগে পর্যটকদের গতিবিধির নিয়ন্ত্রণ দরকার। খুব ভোরেও জঙ্গল এলাকায় ঘুরে বেড়ানোটা যথেষ্ট ঝুঁকি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement