পুলিশি অভিযানে উদ্ধার হওয়া শব্দবাজি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজোর আগে ফের তৎপরতা শুরু হয়েছে বেআইনি বাজি কারবারিদের। এগরা মহকুমায় গত দু’দিনে পুলিশি অভিযানে উদ্ধার হয়েছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি-সহ প্রচুর বাজি তৈরির মশলা। গ্রেফতার করা হয়েছে দু’জনকে।
মহকুমার একাধিক এলাকা জুড়ে বছরভর বাজি তৈরির কারবার চলে। অভিযোগ, যার মধ্যে অধিকাংশই বেআইনি শব্দবাজি। মাঝেমধ্যে পুলিশি ধড়পাকড়ে সাময়িক ভাবে কারবার বন্ধ থাকলেও পুজোর মরসুমে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে বেআইনি বাজির কারবারিরা। সামনে দুর্গাপুজোর মরসুম। তারপর কালীপুজো। উৎসবের ভরা মরসুমের জন্য জোরকদমে চলছে বেআইনি বাজি তৈরি। গত মার্চ মাস থেকে লকডাউনের কারণে পুজোপার্বণের পাশাপাশি, বিয়েবাড়ি ও অন্যান্য উৎসবে ভাটায় বাজির চাহিদা তলানিতে ঠেকেছিল। কিন্তু আনলক পর্বে পুজো হওয়ার খবরে বাজির চাহিদা বেড়েছে। আর সেই সুযোগে তৎপর বেআইনি বাজির কারবারিরা।
কম পয়সায় বেশি লাভের কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আইনের চোখে ধুলো দিয়ে এই কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই এগরা থানার ছত্রী, মঞ্জুশ্রী, সাহাড়া, পানিপারুল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বেআইনি বাজির রমরমা কারবার। পাশাপাশি পটাশপুর থানার গোকুলপুর, পটাশপুর, মথুরা, ব্রজলালচক, চিস্তিপুর ও ভগবানপুরের মহম্মদপুর, বিভীষণপুর, মির্জাপুর পঞ্চায়েত এলাকাতেও বেআইনি বাজির কারবার চলে। একাধিক বার বাজি তৈরির সময় বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, এই ধরনের ঘটনা ঘটলে কয়েকদিন ধরে পুলিশি অভিযান, ধরপাকড় চলে। কিন্তু কিছুদিন পরেই ফের যে কে সেই।
প্রসঙ্গত, গত বছর ভগবানপুরে বেআইনি বাজি তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। কয়েক বছর আগে ছত্রীর কামারডিহা গ্রামে এক ব্যক্তির বাড়িতে বেআইনি বাজি তৈরির সময় বিস্ফোরণে কয়েকজন গুরুতর জখম হয়। পরে এক জন মারা যান। পুজোর ভরা মরসুমে ফের বেআইনি বাজি তৈরি শুরু হয়েছে এই সব এলাকায়। সোমবার এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিষ বেশ কিছু নিষিদ্ধ শব্দবাজি আটক করেছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বাজি তৈরির প্রচুর মশলা। হীরালাল দাস ও সূর্যকান্ত সাউ নামে কামারডিহা গ্রামের দুই বাজি কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মঙ্গলবার কাঁথি আদালতে তোলা হলে বিচারক চোদ্দো দিন জেল হেফাজতে রাখার
নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, গোপনে কলকাতা থেকে বাজি তৈরির মশলা নিয়ে আসে কারবারিরা। সেই মশলা দিয়ে বাজি তৈরি করে কলকাতা-সহ পাশের রাজ্য ওড়িশায় পাচার করা হয় নিষিদ্ধ শব্দবাজি। এগরা মহকুমায় এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাজি তৈরির কারখানা নেই। তবুও প্রতি বছর যে পরিমাণ বেআইনি বাজি উদ্ধার হচ্ছে তা নিয়ে চিন্তিত পুলিশ প্রশাসন। এগরা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক মহম্মদ বৈদুজামান বলেন, ‘‘বেআইনি বাজি তৈরীর বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চলবে। ইতিমধ্যেই দু’জনকে গ্রেফতার করা-সহ নিষিদ্ধ বাজি ও মশলা উদ্ধার হয়েছে। রাস্তায় গাড়ি তল্লাশি-সহ বিভিন্ন এলাকায় গোপনে নজরদারি চালানো হচ্ছে।’’