সোমবার মন্দারমণিতে।
থাকছে নিষেধাজ্ঞা। চলছে তা অমান্য করার রীতি। আর জীবন দিয়ে এর খেসারত দিতে হচ্ছে পর্যটকদের।
সোমবার থেকে আগামী ১১ অগস্ট পর্যন্ত নিম্নচাপের কারণে দিঘা-সহ উপকূল এলাকায় সমুদ্র-স্নান নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। এ ব্যাপারে পর্যটকদের সতর্ক করতে রবিবার থেকে মাইকে প্রচার চালাচ্ছে দিঘা, দিঘা মোহনা এবং মন্দারমণি উপকূল থানার পুলিশ। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জলে নেমে রবিবার দুপুরে ওল্ড দিঘার সি-হক স্নান ঘাটে তলিয়ে মারা যান কল্যাণ দাস নামে কলকাতার টালিগঞ্জ এলাকার এক বাসিন্দা। এ দিনও ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা সর্বত্র পুলিশ এবং সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের কড়া নজরদারি থাকলেও কোথাও কোথাও পর্যটকদের সমুদ্রে নেমে পড়েত দেখা গিয়েছে। নিউ দিঘায় বেশ কয়েকটি জায়গায় সমুদ্রে নেমে স্নান করেন বহু পর্যটক। প্রশাসনিক ভাবে দাবি করা হচ্ছে, দিঘায় নির্দিষ্ট স্নান ঘাটগুলিতে পুলিশ এবং নুলিয়ারা সর্বক্ষণ নজরদারি চালান। তবে স্নান ঘাট ছাড়াও কিছু এলাকায় পর্যটকেরা নেমে পড়ছেন জলে।
মন্দারমণি, তাজপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সৈকত রয়েছে। সেখানেও সব জায়গাতে নজরদারি চালানোর মতো পর্যাপ্ত পুলিশ এবং নুলিয়ার অভাব রয়েছে। তবে প্রশাসন বারবার মনে করাচ্ছে যে, পর্যটকদের নিজেরেই সচেতন থাকা দরকার। কাঁথির এসডিপিও সোমনাথ সাহা বলেন, ‘‘উপকূলবর্তী থানাগুলি মাইকে করে নিয়মিত প্রচার চালায়। ঘাটগুলিতেও নজরদারি চলে। তবে সব জায়গায় নজরদারি চালানোর মতো কর্মী নেই। ওই সব জায়গায় যাতে সমুদ্রে পর্যটকেরা স্নান না করেন, সে জন্য আমরা অনুরোধ করি। তার পরেও পর্যটকদের একাংশ সমুদ্রে নেমে পড়েন। তাই বিপদ ঘটছে।’’
উল্লেখ্য, গত দেড় মাসে জেলার উপকূলবর্তী পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে সমুদ্রে নেমে মারা গিয়েছেন কমপক্ষে ছ'জন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুরের রতন সামন্ত, নদিয়ার কল্যাণী থানা এলাকার সাগর ঢালির মতো পর্যটক। গত মাসে মন্দারমণিতে তলিয়ে গিয়ে মারা গিয়েছে ঝাড়গ্রামের এক কাউন্সিলরের ছেলে এবং তার বান্ধবী। মন্দারমণির বাসিন্দারা জানান, সেখানের দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার সৈকতে পর্যটকেরা যত্রতত্র সমুদ্রে নেমে স্নান করেন। দাদনপাত্রবাড়ে বিশ্ব বাংলা পার্কের পাশাপাশি, মন্দারমণির একেবারে শেষ প্রান্তেও স্নানঘাট রয়েছে। সেখানে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যটকদের গতিবিধির উপর নজরদারি চালায় পুলিশ। নুলিয়ারাও মোতায়েন থাকে ওই সব স্নানঘাট গুলিতে। কিন্তু কিছু কিছু হোটেল এবং লজের পিছনের গেট দিয়ে পর্যটকেরা অনায়াসে সমুদ্রে নেমে স্নান করেন। ওই সব ক্ষেত্রে সমুদ্র স্নানের ঝুঁকি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ দিন প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মন্দারমণির পুরুষোত্তমপুর এবং থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে একাধিক হোটেলের পিছনে পর্যটকেরা দীর্ঘক্ষণ ধরে সমুদ্রে নেমে স্নান করেন। কোথাও পুলিশ বা নুলিয়ার দেখা মেলেনি। তাজপুরেও বিশ্ব বাংলা উদ্যানের সামনে বহু পর্যটককে সমুদ্রে নেমে স্নান করতে দেখা গিয়েছে। সেখানেও ওয়াচ টাওয়ারে নজরদারি ছিল না। শঙ্করপুরে ভর দুপুরে ওয়াচ টাওয়ার ফাঁকাই ছিল।
অবশ্য নজরদারির হাল যাই হোক না কেন, এর মধ্যেও প্রশ্ন একটাই— পর্যটকেরা কি নিষেধাজ্ঞা পালন করতে শিখবেন না!