পুলিনবিহারী বাস্কের বাড়িতে ভাঙচুরের পর। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
এই শহরই ক’দিন আগে দেখেছে শাসকের সৌজন্য। দখল হওয়া কার্যালয় সিপিএমকে ফিরিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। সেই মেদিনীপুরেই এ বার অন্য ছবি। প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, দলের রাজ্য কমিটির সদস্য পুলিনবিহারী বাস্কের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল একদল তৃণমূলকর্মীর বিরুদ্ধে। বাড়ির সামনে বোমাবাজিও করা হয়।
শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পুলিনবাবুর কোতবাজারের বাড়িতে। পুলিনবাবুর অভিযোগ, ‘‘পরিকল্পনামাফিক হামলা চালানো হয়েছে। তৃণমূলের লোকেরাই হামলা চালায়।’’ শাসক দল অবশ্য ঘটনার দায় নিতে নারাজ। তৃণমূলের মেদিনীপুর শহর সভাপতি আশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একটা ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। তবে তার সঙ্গে দলের কেউ যুক্ত নয়। দল এমন ঘটনায় প্রশ্রয় দেয় না।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের রাজনীতিতে পুলিনবাবু চেনা মুখ। তিনি জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে গোপীবল্লভপুরের সিপিএম প্রার্থীও ছিলেন পুলিনবাবু। তবে থাকেন মেদিনীপুরেই। অভিযোগ, শনিবার রাতে একদল তৃণমূলকর্মী হঠাৎই তাঁর বাড়ির সামনে মিছিল করে আসে। তারপর প্রথমে বাড়ি লক্ষ করে ইট ছোড়ে তারা। জানলার কাচ ভাঙে। বোমাবাজিও হয়। বাড়িতে তখন সস্ত্রীক ছিলেন পুলিনবাবু। তিনি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। ততক্ষণে অবশ্য শাসক দলের ওই কর্মীরা চম্পট দেয়।
বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পরে বিরোধীদের উপর হামলা, তাদের দলীয় কার্যালয় দখলের মতো ঘটনা মেদিনীপুরেও ঘটছিল। কুইকোটার বাউরিপাড়ায় সিপিএমের শাখা অফিস যেমন দখল নিয়েছিল তৃণমূলের কিছু লোক। তখন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তীকে সব জানান সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক সারদা চক্রবর্তী। দলীয় কার্যালয় ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানান। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই শাখা অফিসের দখল ফিরে পায় সিপিএম। তারপর প্রমোদনগর, টাউন কলোনি এবং ঈশ্বরপুরের শাখা অফিসের দখলও একে একে ফেরত পায় সিপিএম।
সেই শহরে কেন সিপিএম নেতার বাড়িতে হামলা?
শনিবার রাতের ঘটনার পরে সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক সারদাবাবু বলেন, ‘‘ভোটে হার-জিত থাকেই। কিন্তু অশান্তি কেন হবে!’’ এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর শিপ্রা মণ্ডলের অবশ্য দাবি, ‘‘ঘটনার সঙ্গে দলের কেউ যুক্ত নয়। তৃণমূল শান্তির পক্ষে।’’ পুলিশের এক সূত্রে খবর, শনিবার রাতে হামলার খবর পেয়ে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার আইসি বিশ্বজিৎ সাহা শিপ্রাদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার আর্জি জানান। শিপ্রাদেবী আইসি-কেও জানিয়ে দেন, দলের এই ঘটনায় কোনও মদত নেই। তবে তৃণমূলের এক জেলা নেতা মানছেন, “কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটছে। তবে যে কোনও মূল্যে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। কর্মীদের সেই বার্তা দেওয়া হচ্ছে।’’