সমাজমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে এমনই নানা পোস্ট।
পুরভোটে টিকিট পেতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে কারা দরবার করেছিলেন? দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এই প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির এক সদস্য। তারপরই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে ওই সদস্যকে বের করে দেওয়া নিয়ে ফের প্রকাশ্যে এল জেলা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
প্রাক্তন মন্ত্রী গ্রেফতারের পরই জেলার পার্থ-ঘনিষ্ঠ নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে ‘তোপ’ দাগছেন তৃণমূলের একাংশ। সমাজমাধ্যমের দেওয়াল ছাড়িয়ে অরণ্যশহর ও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তা এখন চর্চার বিষয়। পার্থ-ঘনিষ্ঠ নেতারা মাত্র কয়েক বছরে কী ভাবে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন, সে ব্যাপারে তদন্তের দাবি উঠছে দলের অন্দরেই।
এই আবহেই জেলা সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাসের নামে ‘মাধবী বিশ্বাস ফ্যান গ্রুপ’ নামে তৃণমূলের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পার্থ ঘনিষ্ঠ নেতা-নেত্রীদের নাম না নিয়ে তাঁদের পদাধিকার উল্লেখ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পোস্ট করেছিলেন এক কর্মী। জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য বিশ্বরঞ্জন ওরফে রিংকা মুখোপাধ্যায় সেখানে লিখেছিলেন, ‘তুমি বাস্তব কথা তুলে ধরেছ।’ রিংকা আরও লেখেন, ‘পুরসভার প্রার্থী নিয়ে পার্থদার কাছে কারা কারা কাদের জন্য অনুরোধ করতে গিয়েছিল, সেই বিষয়টি সবার জানা।’ এরপরই রিংকা ও তৃণমূলের ওই কর্মীকে গ্রুপ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এ বার সমাজমাধ্যমে এ নিয়ে সরব হন রিংকা। সেখানে নানা মন্তব্যের লাইন পড়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অ্যাড করে দেওয়া হয়। তখন রিংকা লেখেন, ‘রিমুভ করে আবার জয়েন করলে কেন?’ তারপর ফের রিংকাকে ‘রিমুভ’ করে দেওয়া হয়। পরে রিংকা বলেন, ‘‘যেটা সত্যি সেটাই লিখেছিলাম। কারা কাদের জন্য মহাসচিবের কাছে গিয়েছিল, কী কী হয়েছিল সেটা সবাই জানেন। ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এমন কেউ আছেন যিনি মহাসচিবের কাছে পুরোভটের টিকিট নিয়ে সুপারিশ করতে গিয়েছিলেন। তাঁর গায়ে লেগেছে বলেই রিমুভ করে দিয়েছেন।’’ সভাধিপতি মাধবী অবশ্য হোয়াটসআ্যপ গ্রুপে কী হয়েছে তা জানা নেই বলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন।
এ দিন পার্থকে মন্ত্রিসভা ও দলের সব পদ থেকে অপসারিত করা হয়েঠে। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সুমন সাহু বলছেন, ‘‘দল দুর্নীতির সঙ্গে আপস করে না। সেটা শীর্ষ নেতৃত্বের পদক্ষেপে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ তবে পার্থ ঝাড়গ্রামের দায়িত্ব পাওয়ার পরে জেলার অনেক নেতা-নেত্রীর প্রভাব-প্রতিপত্তি বেড়েছে। কেউ উঁচু পদে এসেছেন, কারও আর্থিক ভাবে বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। তৃণমূলের এক নেতার দাবি, ‘‘পার্থ ঘনিষ্ঠদের আয়ের উৎস খতিয়ে দেখা হোক। যাঁরা কিছুই করেন না তাঁদের কী করে বাড়ি, গাড়ি হয়েছে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’’ পুরভোটে টিকিট বিলি ও পদপ্রাপ্তিতে কত টাকার লেনদেন হয়েছে, তা দলীয় স্তরে তদন্ত করে দেখারও দাবি তুলছেন অনেকে। শহরের এক যুব নেতার কথায়, ‘‘নেত্রীর কাছে কাছে অনুরোধ এই সব লোকদেরও চিহ্নিত করে সরানো দরকার।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা বলেন, ‘‘কারা ঘনিষ্ঠ রয়েছে তা দল দেখছে। দল নিশ্চয়ই কোনও ব্যবস্থা নেবে।’’