—প্রতীকী চিত্র।
‘গীতাপাঠ বনাম ফুটবল’ নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে স্বামী বিবেকানন্দকে অবমাননা করার অভিযোগ তুলে আন্দোলনেও নেমেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। এবং এই আবহে খোদ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে ফুটবলকেই তৃণমূল হাতিয়ার করতে চাইছে।
শুভেন্দুর কেন্দ্রে স্বাভাবিক ভাবেই প্রবল ভাবে সক্রিয় বিজেপি। ২০২১ সালের পরে কার্যত এখানে পাত্তা পাচ্ছে না তৃণমূল। শুভেন্দু এখনও পর্যন্ত এক ইঞ্চি জমিও প্রতিপক্ষকে ছেড়ে দেননি। নন্দীগ্রামে তাঁর দাপুটে উপস্থিতি রয়েছে। তবে লোকসভা ভোটের আগে নন্দীগ্রামে জমি ফিরে পেতে শাসক দলও মরিয়া। তাদের অনুসৃত বিভিন্ন পন্থার মধ্যে ‘ফুটবল’ অন্যতম বলে মনে করা হচ্ছে।
নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের সোনাচুড়া ও নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের আশদতলা এলাকায় ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এক অরাজনৈতিক সংগঠনের নামে আগামী ৪ ও ৫ জানুয়ারি আশদতলা বিনোদ বিদ্যাপীঠ হাইস্কুল সংলগ্ন ময়দানে এবং ৬ ও ৭ জানুয়ারি সোনাচুড়া হাইস্কুলের ময়দানে ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। দু’টি জায়গাতেই আয়োজকদের অধিকাংশ ‘তৃণমূলের লোক’ হিসেবেই পরিচিত। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও তৃণমূলের ব্লক ও জেলার নেতারা আমন্ত্রিত হয়েছেন।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী হয়ে জয়ী হন শুভেন্দু অধিকারী। সাংগঠনিক ভাবে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে তৃণমূল। এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলে জেলাপরিষদ সহ অধিকাংশ পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রামপঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে এলেও নন্দীগ্রাম-১ ও ২ পঞ্চায়েত সমিতি সহ দুই ব্লকের অধিকাংশ গ্রামপঞ্চায়েত বিজেপির দখলে গিয়েছে। নন্দীগ্রামে এই বিপর্যয়ে দলের নেতা-কর্মীদের অনেকেই হতাশ হয়ে তৃণমূলের কর্মসূচিতে সামিল হচ্ছেন না এবং কার্যত গৃহবন্দি হয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। সাংগঠনিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে তৃণমূলের এখন ভরসা ফুটবল।
৪ ও ৫ জানুয়ারি নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের আশদতলায় ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়েছে। আর ৬ ও ৭ জানুয়ারি সোনাচুড়ায় প্রাক্তন তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান তথা নিহত নেতা নিশিকান্ত মণ্ডলের স্মরণে ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। আশদতলায় ফুটবল টুর্নামেন্টের অন্যতম তত্বাবধায়ক হিসেবে রয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা দলের ব্লক সাধারণ সম্পাদক আজিজুল রহমান।
একইভাবে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ‘সোনাচুড়া সার্বিক উন্নয়ন সমিতি’র উদ্যোগে আগামী ৬ ও ৭ জানুয়ারি দিবারাত্রি ১৬ দলের ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়েছে। ওই আয়োজক কমিটি’র সম্পাদক সোনাচুড়া অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি কালীকৃষ্ণ প্রধান এবং সভাপতির পদে রয়েছেন তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি সবুজ প্রধান। তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ’’নন্দীগ্রাম এলাকায় দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের ফের সক্রিয় করার লক্ষ্যে ও এলাকার মানুষের সঙ্গে সংযোগস্থাপন করতেই ফুটবল খেলার আয়োজন হচ্ছে।’’
নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা তথা দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, ’’সোনাচুড়া ও আশদতলায় তৃণমূলের তরফে ফুটবল প্রতিযোগিতার কথা শুনেছি। তবে নন্দীগ্রামে তৃণমূল এখন অস্তিত্বহীন। যতই ওরা খেলাধুলা করুক, এখানকার মানুষকে আর তৃণমূলমুখী করাযাবে না।’’