নির্দেশিকা আসার আগে শনিবার তৃণমূলের প্রস্তুতি সভা। নিজস্ব চিত্র
বিরোধীদের একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। সেই সঙ্গে রয়েছে দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া। এই আবহে ২১ জুলাই শহিদ দিবস পাল করতে চলেছে তৃণমূল। দলের অস্বস্তি যাতে আর না বাড়ে সেজন্য ইতিমধ্যেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কর্মী-নেতাদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন, ‘২১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানের জন্য কোনও চাঁদা তোলা যাবে না’। এ বার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতে দলের তরফে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতির প্রচার নিয়ে নয় দফা নির্দেশিকা জারি করা হল।
২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা নিয়ে ইতিমধ্যেই কাঁথিতে গোষ্ঠীকোন্দলের আভাস মিলেছে। কোথাও দলের পাশাপাশি শাখা সংগঠনের তরফেও পৃথক প্রস্তুতি সভা করা হচ্ছে। আবার কোথাও দলীয় নির্দেশ অমান্য করে প্রচারের ব্যানারে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও দলের অন্য নেতা, মন্ত্রী-বিধায়কদের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর জেলা থেকে ব্লক, অঞ্চল এমনকি বুথ স্তরের সাংগঠনিক পদাধিকারীদের সতর্ক করল জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
কাঁথি শহরে শনিবার সংখ্যালঘু সেলের জেলা কমিটির উদ্যোগে টাউন হলে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা হয়। সেখানে মন্ত্রী অখিল গিরি, যুব জেলা সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি অন্য পদাধিকারীরা ছিলেন। যদিও ঠিক তার পরের দিন রবিবার কাঁথি সংগঠনিক জেলা তৃণমূলের তরফে পৃথক প্রস্তুতি সভা হয়। সেখানে অবশ্য জেলা সভাপতি তরুন মাইতি, বিধায়ক উত্তম বারিক উপস্থিত ছিলেন। তবে অখিল গিরি কিংবা সুপ্রকাশ গিরি ছিলেন না। সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি শেখ আনোয়ার উদ্দিন মন্ত্রী অখিল গিরির ঘনিষ্ঠ। আর মন্ত্রী শিবিরের সঙ্গে জেলা সভাপতির অনুগামীদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে বলে দাবি দলেরই একটা অংশের। এভাবেই জেলার বিভিন্ন ব্লক, অঞ্চল এবং বুথস্তরেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া দেখা গিয়েছে।
দলের মধ্যে এমন গোলমাল যাতে আর না বাড়ে সে জন্য নয় দফা নির্দেশিকার একটি হল, ‘২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা- প্রচারে দলকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে’। নির্দেশিকা মেনে শহিদ সমাবেশের সমর্থনে কাঁথি শহর সহ রামনগর, মারিশদা, হেঁড়িয়া, হলদিয়া, মহিষাদল এবং তমলুক এলাকায় দেওয়াল লিখন হয়েছে। নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, কোনওভাবেই নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না ফেস্টুন, ব্যানারে। প্রচারে কোনও ব্যক্তির নাম দেওয়া যাবে না। নিজস্ব এলাকার সংগঠনের নাম প্রচারে লিখতে হবে। এ ব্যাপারে জেলা যুব সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি বলছেন, ‘‘প্রচারের ব্যানার কেমন হবে সেই সংক্রান্ত রাজ্যের তরফে পাঠানো সিডি ক্যাসেট রবিবার আমাদের হাতে এসেছে। কিছু কিছু জায়গায় যেখানে জেলার নেতাদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল সেই সব জায়গাতেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’’ কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি তরুন মাইতি বলেন, ‘‘১৬ জুন প্রথম প্রস্তুতি মিটিংয়ে রাজ্য থেকে এই সব নির্দেশিকার ব্যাপারে অবগত করা হয়েছিল। তারপর ব্লক সভাপতিদের সরাসরি আমরা তা জানিয়েও দিয়েছিলাম। তারপরেও শাখা সংগঠনগুলি কোথাও কোথাও দলের মূল সংগঠনের পাশাপাশি পৃথকভাবে প্রস্তুতি মিটিং করছে বলে জেনেছি। জেলা থেকে বুথস্তর পর্যন্ত যাতে রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ কার্যকর করা হয় ফের তা আমরা সকলকে জানিয়ে দিচ্ছি।’’