শুভেন্দু অধিকারী।
রাখি বন্ধন উৎসব উপলক্ষে সরকারি বা দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়নি তাঁকে। তা সত্ত্বেও, শুভেন্দু অধিকারীকে সামনে রেখেই রাখিবন্ধন কর্মসূচিতে মেতে উঠলেন দলের একাংশ কর্মী-সমর্থক। সোমবার জেলার বিভিন্ন করোনা হাসপাতাল এবং সেফ হোমে করোনা আক্রান্তদের জন্য শুভেন্দুর তরফে পাঠানো হয় রাখি, মিষ্টি, মাস্ক। শুভেন্দু অবশ্য এ দিন কোলাঘাটে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অতিথিশালায় শহিদ মাতঙ্গিনীর বিএমওএইচ দেবপম হাজরাকে রাখি, ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সাংগঠনিক রদবদলের পর থেকে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনার শেষ নেই। রাখিবন্ধনেও তা অব্যাহত। রাজ্য যুব কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে প্রতিটি ব্লকে রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হয়েছে এ দিন। এ ছাড়া তৃণমূলের দলীয় উদ্যোগে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাখি উৎসব হয়েছে। দলের মহিলা সংগঠনের তরফে ব্লকের সাংগঠনিক পদাধিকারী এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে খামে করে রাখি পৌঁছে দেওয়া হয়। এ দিন দলের কর্মসূচির পাশাপাশি নিজের মতো ফের জনসংযোগ করেছেন শুভেন্দু। তাঁর অনুগামী নেতা-কর্মীরা রাখি বন্ধন উৎসব পালনে তাঁর ছবি দেওয়া পাঁচ হাজার রাখি নিয়ে নেমে পড়েছিলেন রাস্তায়। দলের কর্মী-সমর্থক থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেরই হাতে পরিয়ে দেওয়া হয় সেই ‘শুভেন্দু রাখি’।
জেলার পাঁশকুড়া, চণ্ডীপুর, কাঁথি-সহ বিভিন্ন করোনা হাসপাতাল এবং হলদিয়া, ময়নায় সেফ হোমে এ দিন শুভেন্দু অধিকারীর পক্ষ থেকে রাখি, মিষ্টি, মাস্ক পৌঁছে দেওয়া হয়। তমলুকের নিমতৌড়ির হোমের আবাসিক প্রতিবন্ধী-সহ অন্যান্যদের জন্যও রাখি ও মিষ্টি পাঠান শুভেন্দু। হোমের তরফে যোগেশ সামন্ত বলেন, ‘‘হোমের ২০০ জন আবাসিকের জন্য মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এ দিন রাখি ও মিষ্টি উপহার পাঠিয়েছেন।’’
দেশপ্রাণ ব্লকের আউরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ও ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস ভুঁইয়ার উদ্যোগে এ দিন সব স্তরের মানুষদের শুভেন্দুর ছবি-সহ রাখি পরানো হয়। স্থানীয় ভাবে দেবাশিস শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। প্রসঙ্গত সাংগঠনিক রদবদলে দলে শুভেন্দুর ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে বলে মনে করেন তার অনুগামীরা। তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে গড়া সাত সদস্যের শীর্ষ কমিটির প্রথম বৈঠকেও অনুপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু। তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নানা জল্পনা অব্যাহত। রবিবার একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে শুভেন্দুকে গুরুত্ব না দেওয়ায় সরাসরি তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি নিজের মতামত জানিয়েছেন ময়নার বিধায়ক ও সদ্য প্রাক্তন তৃণমূলের জেলা যুব সভাপতি সংগ্রাম দোলই। এমন পরিস্থিতিতে নিজের ছবি-সহ রাখি সাধারণ মানুষকে পরানো সমান্তরাল জনসংযোগেরই নামান্তর বলে মনে করছে জেলার রাজনীতিক মহল।
এ প্রসঙ্গে দেবাশিসের বক্তব্য, ‘‘সিপিএমের অত্যাচারের হাত থেকে শুভেন্দুর হাত ধরে এলাকার মানুষ পরিত্রাণ পেয়েছিলেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্যই ওই রাখি সাধারণ মানুষের হাতে পরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ তবে করোনা সতর্কতায় সামাজিক দূরত্বের বিধি না মেনে কী ভাবে তাঁরা মানুষকে রাখি পরালেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন দলেরই একাংশ নেতা-কর্মী। দেশপ্রাণ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিরাজ গুড়িয়া বলেন, ‘‘দলের নির্দেশ মেনে করোনা সম্পর্কিত সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মহিলা সংগঠনের তরফে ব্লকের সাংগঠনিক
পদাধিকারী এবং নির্বাচিত ৩০০ জনপ্রতিনিধির হাতে খামে করে রাখি পৌঁছে দেওয়া হয়।’’
তা হলে শুভেন্দু অনুগামীরা উল্টোপথে হাঁটলেন কেন? এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আর দেবাশিসের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।