ডায়াবিটিস বায়োব্যাঙ্ক কী, এতে কী সুবিধা হতে চলেছে? —প্রতীকী ছবি।
দেশে প্রথম ডায়াবিটিসের জন্য তৈরি হল বায়োব্যাঙ্ক। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং মাদ্রাজ ডায়াবিটিস রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এমডিআরএফ)-এর যৌথ উদ্যোগে বায়োব্যাঙ্কটি তৈরি হয়েছে চেন্নাইয়ে। ক্যানসার, লিভারের জটিল অসুখ-সহ আরও নানা দুরারোগ্য রোগ নিয়ে গবেষণা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য বায়োব্যাঙ্ক আগেই ছিল দেশে। কিন্তু ডায়াবিটিসের জন্য বায়োব্যাঙ্ক এই প্রথম।
কী কাজ এই বায়োব্যাঙ্কের?
বায়োব্যাঙ্ক হল এমন একটি ইউনিট, যেখানে রোগীদের শরীর থেকে নেওয়া নমুনা সংরক্ষণ করে রেখে তা নিয়ে গবেষণা করা হয়। যে রোগ নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে, তার জন্য আলাদা ইউনিট তৈরি হবে। যেমন, ক্যানসারের বায়োব্যাঙ্কে কেবল ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদেরই জৈবিক নমুনাই সংরক্ষণ করা হবে। আবার লিভারের নানা জটিল অসুখের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য বায়োব্যাঙ্ক আলাদা হবে। অনেকটা ডেটাব্যাঙ্কের মতো। রোগের ধরন, কত জনের মধ্যে ছড়াচ্ছে, রোগের তীব্রতা কেমন, চিকিৎসা পদ্ধতি কী হতে পারে— এই সব নানা বিষয় নিয়ে সমীক্ষা হয় সেখানে। পরীক্ষার ফলাফল, সমীক্ষার রিপোর্ট সংরক্ষণ করেও রাখা হয়, যাতে ভবিষ্যতে আরও উচ্চ পর্যায়ের গবেষণা করা যায়।
আইসিএমআর জানাচ্ছে, দেশে ডায়াবিটিস রোগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে আলাদা বায়োব্যাঙ্ক তৈরি করতেই হত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেড় লাখের মতো ডায়াবেটিকের দেহকোষ ও রক্তের নমুনা এই বায়োব্যাঙ্কে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেগুলি বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা বোঝার চেষ্টা করছেন, কেন ভারতে ডায়াবিটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে জানতে চাইছেন, এর সঙ্গে কী ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দেশের নানা প্রান্তের মানুষজনের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের পদ্ধতি। কেবল তা-ই নয়, জিনের গঠন ও বিন্যাসও এর জন্য দায়ী। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে পারলে তার নিরাময়ের উপায়ও চটজলদি বার করা যাবে।
কিছু দিন আগেই ‘দ্য ল্যানসেট ডায়াবিটিস এবং এন্ডোক্রিনোলজি’ বিজ্ঞান পত্রিকায় এমন একটি সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল, যা ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতোই। সেখানে দাবি করা হয়েছিল, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডায়াবিটিসের রোগী নাকি ভারতেই। সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়, ভারতের মোট জনসংখ্যার ২৩.৭ শতাংশই নাকি ডায়াবেটিক। ভবিষ্যতে প্রায় ১৩ কোটি ৬ লক্ষ ভারতীয়ের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ভারতীয় তথা দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দাদের মধ্যে প্রি-ডায়াবিটিস থেকে ডায়াবিটিসের দিকে এগোনোর হার এখন বিশ্বে সর্বাধিক।
শুধু তা-ই নয়, সমীক্ষা আরও জানাচ্ছে যে, ভারতে ডায়াবিটিসে আক্রান্ত রোগীদের ৬২ শতাংশেরই নাকি কোনও রকম চিকিৎসাই হয়নি। ১৯৯০ সালের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, ভারতে মোট জনসংখ্যার ১১.৯ শতাংশ মহিলা ও ১১.৩ শতাংশ পুরুষ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত, কিন্তু এখন এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। কী ভাবে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সে নিয়ে চিন্তাই এখন বেশি। বায়োব্যাঙ্ক তৈরি হওয়ায় ভবিষ্যতে ডায়াবিটিসের প্রকোপ অনেক কমানো যাবে বলেই মনে করছেন গবেষকেরা।