Abhishek Banerjee

সুফিয়ানের নাম না নেওয়ায় বাড়বে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, আশঙ্কা দলেই

কাঁথিতে শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ি থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে সভা করে শুভেন্দুকেই অভিষেক তোপ দাগবেন, এটাই স্বাভাবিক ছিল নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের অনুগামীদের কাছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৫৩
Share:

কাঁথির সভায় অভিষেক, শেখ সুফিয়ানের নাম মুখেই না আনায় হতাশ তাঁর অনুগামীরা। সুফিয়ানের প্রতি এমন আচরণে নন্দীগ্রামে গোষ্ঠীকোন্দল আরও তীব্র হতে পারে বলে মনে করছে তৃণমূলের একাংশ।

Advertisement

কাঁথিতে শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ি থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে সভা করে শুভেন্দুকেই অভিষেক তোপ দাগবেন, এটাই স্বাভাবিক ছিল নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের অনুগামীদের কাছে। তাঁরা একাধিক বাস উঁচিয়ে কাঁথির সভায় গিয়েছিলেন এটুকু দেখার জন্য যে, তাঁদের নেতা সভায় দলের সর্বোচ্চ নেতার কাছে কতটা মান্যতা পান! কিন্তু হতাশই হতে হয়েছে তাঁদের। মঞ্চে সুফিয়ান হাজির থাকলেও শনিবার তাঁর নামটুকুও উচ্চারণ করেননি অভিষেক। অথচ সভার শুরুতেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক একে একে উচ্চারণ করেছেন সুফিয়ান বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা তমলুক জেলা সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান পীযূষ ভুঁইঞা থেকে শুরু করে এক ডজনেরও বেশি নাম। জেলা সভাধিপতি উত্তম বারিক থেকে একাধিক কর্মাধ্যক্ষের নামও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে অভিষেকের কন্ঠ থেকে উচ্চারিত হয়নি। যেখানে জেলা পরিষদেরই সহ সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান। এই ঘটনা নন্দীগ্রামে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল আরও বাড়িয়ে দিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একই মত পোষণ করছেন শাসক দলের অনেকেই।

যদিও তাঁর নাম না নেওয়াকে তেমন কিছু বলে মনে করছেন খোদ সুফিয়ান। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কিছুই মনে করছি না। সবার নাম নেওয়া সম্ভব নয়। হয়তো কোনও ভুল হয়েছে। এত বড় অনুষ্ঠানে সেটা হতেই পারে। অনেকে অনর্থক এটাকে গোষ্ঠীকোন্দল বলে চালাতে চাইছে। আমাকে কলকাতা থেকে মঞ্চে থাকতে বলা হয়েছিল। আমি দলের সৈনিক হিসেবে মঞ্চে ছিলাম। এর মধ্যে অন্য কিছু নেই।’’

Advertisement

তবে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছেুক সুফিয়ান অনুগামী এক নেতার দাবি, ‘‘যে মানুষটাকে কলকাতা থেকে মঞ্চে থাকার জন্য বলা হল, মঞ্চে তাঁর নামই নেওয়া হল না! এটা কী তবে জনসমক্ষে তাঁকে হেয় করার জন্য?’’ আরেক সুফিয়ান অনুগামী বলেন, ‘‘কুণাল ঘোষ দায়িত্ব নিয়ে নন্দীগ্রামে আসার পর যে ভাবে সুফিয়ানদাকে ডেকে পীযূষ ভুঁইঞার সাথে এক মঞ্চে বসিয়েছিলেন, যেভাবে সুফিয়ানদার বাড়ি গিয়েছিলেন তাতে আমরা ভেবেছিলাম দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার পক্ষপাতী। কিন্তু এখন দেখছি আমাদেরই বোঝার ভুল। জেলায় কোনও সভায় এসে যদি দলের কোনও শীর্ষ নেতা মঞ্চে থাকা সত্ত্বেও সুফিয়ানদার নাম নিতে ভুলে যান তবে তো তিনি নন্দীগ্রাম, ভূমি আন্দোলনকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ।’’

যদিও এই বিষয়ে পীযূষ ভুঁইঞা গোষ্ঠীর নেতাদের বক্তব্য, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ দলের সর্বোচ্চ নেতাদের অনুমোদনেই পীযূষ ভুঁইঞা চেয়ারম্যান কিংবা নন্দীগ্রাম-২ ব্লক সভাপতি মনোনীত হন। কিন্তু সুফিয়ান সেই পদগুলিকে ক্রমাগত অস্বীকার করেছেন। তারপরও তিনি ভাবলেন কী করে যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নাম উচ্চারণ করবেন।’’ সুফিয়ান বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের এক নেতা বলেন, ‘‘সুফিয়ান নিজেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক বলেন অথচ কাজে তার উল্টো। কেন উনি টেঙ্গুয়ায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় গেলেন না? কেন অনুপস্থিত থাকলেন বয়ালের সভায়? নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার জন্য যে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়েছিল সেখানেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।’’

সুফিয়ান অবশ্য সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন, তাঁর জবাব, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার জন্য একাধিক প্রস্তুতি সভা করেছি। টেঙ্গুয়ায় প্রস্তুতি সভা হয়নি, পথসভা হয়েছিল আর বয়াল নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের মধ্যে পড়ে না।’’

তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর এমন লড়াইতে মজাই পাচ্ছে বিজেপি। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরাজয় কুণাল ঘোষ মানতে পারে কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মানবেন কেন? আফটার অল ভাইপো বলে কথা। সুতরাং সুফিয়ানের নাম তিনি নেবেন না এটাই স্বাভাবিক। সুফিয়ান সাহেবের বুঝে নেওয়া উচিত তাঁর জমানা শেষ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement