পঞ্চায়েত ভোটের ফল প্রকাশের পরে রাজ্যের অধিকাংশ জায়গার তুলনায় উল্টো চিত্র দেখা গিয়েছিল ময়নার বাকচায়। সেখানে ঘরছাড়া হতে হয়েছিল শাসক দল তৃণমূলের প্রায় শতাধিক কর্মী-সমর্থককে। শেষ পর্যন্ত সোমবার পুলিশ পাহারায় বাকচা ও গোড়ামহল গ্রামের প্রায় ৫০ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে তাঁদের বাড়িতে ফেরানো হয়েছে।
রাজনৈতিক সংঘর্ষপ্রবণ ময়নার বাকচা গ্রামপঞ্চায়েতে এ বার বিজেপি ক্ষমতা দখলের পরেই বাকচা, গোড়ামহল গ্রামের বাসিন্দা ওই তৃণমূল কর্মী- সমর্থকেরা ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ময়না বাজারে তৃণমূলের ব্লক কার্যালয়ে। একাংশ কর্মী-সমর্থক ভিন রাজ্যে কাজে চলে যান। কিন্তু প্রায় ২ মাস ধরে ঘরছাড়া থাকায় ওই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের পরিবার বিপাকে পড়েছিলেন। ঘরছাড়া কর্মী-সমর্থকদের আশ্রয় দিয়ে ত্রাণ শিবির চালানো নিয়ে সমস্যা বাড়ছিল ময়না ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বেরও।
ওই সব কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ফেরানোর জন্য পুলিশ-প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও ঘরছাড়া ওই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁদের বাড়ি ফেরায় আপত্তি জানিয়েছিলেন বাকচা এলাকার বিজেপি নেতৃত্ব। তবে পুলিশের হস্তক্ষেপে সোমবার তাঁদের মধ্যে অনেকে ঘরে ফেরেন। এ দিন সকালে ময়না থানার প্রাঙ্গণ থেকে ঘরছাড়া ওই তৃণমূল-কর্মী সমর্থকদের কয়েক’টি গাড়িতে চাপিয়ে পুলিশ পাহারা দিয়ে বাকচা এলাকায় নিয়ে যায়। বাকচা ও গোড়ামহল গ্রামে তাঁরা নিজেদের বাড়িতে ঢোকেন ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, রাজনৈতিক সংঘর্ষপ্রবণ বাকচা গত কয়েক বছর ধরে তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে বার বার উত্তপ্ত হয়েছে। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে গত পয়লা মে বাকচার গোড়ামহল গ্রামে বিজেপি নেতা বিজয় ভুঁইয়াকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ প্রাক্তন তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মিলন ভৌমিক-সহ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছিল। বাকি অভিযুক্তেরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এ বার পঞ্চায়েত ভোটে ময়না ব্লকের মোট ১১টি গ্রামপঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টিতে তৃণমূল জয় পেয়েছে। কিন্তু বাকচা পঞ্চায়েত ও লাগোয়া গোজিনা পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। গত ১১ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের ফল ঘোষণার পরেই বাকচা এলাকার প্রায় শতাধিক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে আসেন ময়না বাজারে দলের ব্লক কার্যালয়ে। তৃণমূল ব্লক নেতৃত্বের তরফে ঘরছাড়া ওই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ত্রাণ শিবির চালানো হচ্ছিল ।
প্রায় দু’মাস ঘরছাড়া থাকার পরে সোমবার বাড়িতে ফিরেছেন বাকচা অঞ্চল তৃণমূলের আহ্বায়ক সুজিত কর। তিনি বলেন, ’’পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরেই বাড়ি ছেড়েছিলাম। ফিরতে পেরে ভাল লাগছে। এলাকার যাঁরা যে রাজনৈতিক দল করুন না কেন, আমরা সবাই মিলেমিশে থাকতে চাই।’’ ময়না ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সন্দীপব্রত দাসের কথায়, ‘‘বাকচা এলাকার আমাদের ঘড়ছাড়া দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ফেরানোর জন্য পুলিশকে জানানো হয়েছিল। পুলিশের সহায়তায় প্রায় ৫০ জন কর্মী-সমর্থক বাড়িতে ফিরেছেন। এখনও কয়েকজন বাইরে রয়েছেন।’’
তবে ঘরছাড়া তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা বাড়িতে ফেরার পরে ফের বাকচায় অশান্তির আশঙ্কা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির বাকচা অঞ্চল আহ্বায়ক তথা জেলাপরিষদ সদস্য উত্তম সিংহ বলেন, ’’তৃণমূলের ঘরছাড়া কর্মী-সমর্থকেরা পুলিশের সাহায্যে ফিরেছেন। আমাদের তাতে কিছু সমস্যা নেই। তবে এঁদের মধ্যে যাঁরা চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে টাকা নিয়েছিলেন ও তোলাবাজিতে অভিযুক্ত তাঁদের নিয়ে যদি কোনও গোলমাল হয় তার দায় পুলিশকে নিতে হবে।’’ ময়না থানার পুলিশ জানিয়েছে, ঘরছাড়ারা বাড়ি ফেরার পরে যাতে গোলমাল না ঘটে, সে জন্য এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে।