শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে এখনও তিনি তৃণমূলের বিধায়ক। বিধায়ক পদ বা দল ছাড়ার বিষয়ে কোনও কথা বলেননি। তবে শুধু মন্ত্রিত্ব ছাড়া নিয়েই উথালপাথাল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তৃণমূল শিবির। কার্যত সেই শিবির এই মুহূর্তে যেন ৩ ভাগ!
প্রথম ভাগে রয়েছেন শুভেন্দু অনুরাগীরা। তাঁরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের নেতার সঙ্গেই থাকছেন। এর পরে শুভেন্দু যা সিদ্ধান্ত নেবেন তা দেখে তাঁরাও পথ ঠিক করবেন। প্রয়োজনে শিবির বদল করবেন। মহিষাদলের অমৃতবেড়িয়ার পোড় খাওয়া তৃণমূল নেতা তথা স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান রঘুনাথ পণ্ডা বলেন, ‘‘শুভেন্দুর সিদ্ধান্তের সঙ্গে আছি। এর পর শুভেন্দু যেখানে থাকবেন সেখানেই থাকব।’’
অনেক নেতা আবার এখনই নিজেদের নাম প্রকাশ্যে না আনার শর্তে জানান, শুভেন্দুবাবুর সঙ্গে তাঁরা বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। বাম শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই ভোলার নয়। তাই নেতা হিসেবে তাঁরা শুভেন্দুকেই চেনেন। এই তালিকায় হলদিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের একাধিক জেলা পরিষদ সদস্যও রয়েছেন।
দ্বিতীয় ভাগে রয়েছেন জেলায় শুভেন্দু-বিরোধী হিসেবে পরিচিত যাঁরা। মন্ত্রীর ইস্তফার খবরে তাঁরা যথেষ্ট আনন্দিত হয়েছেন। দিনের পর দিন টানাপড়েনের অবসান ঘটেছে বলেই তাঁদের মত। এই তালিকায় সামনের সারিতে রয়েছেন হলদিয়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডল, রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি, নন্দীগ্রামের শেখ সুপিয়ান।
আরও পড়ুন: ধাপে ধাপে বিচ্ছেদ, মন্ত্রিত্বের পর কি জোড়াফুল ছেড়ে পদ্মফুলে শুভেন্দু
রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে শুভেন্দু অধিকারীর ইস্তফা
আর এই দু’পক্ষের পাশাপাশি জেলায় আরও একটি ভাগ রয়েছে। সে ভাগে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা শুভেন্দুর অনুগামী হলেও শুক্রবারের পরে কিছুটা সাবধানী। যেমন নন্দীগ্রামের আবু তাহের। এত কাল প্রতি পদে শুভেন্দুর সঙ্গে থাকলেও এখন বেশ সাবধানী। শুক্রবার কোনও মন্তব্যই করতে চাননি তিনি। তাঁর এক ঘনিষ্ঠের বক্তব্য, ‘‘শুভেন্দুর পরবর্তী পদক্ষেপের পাশাপাশি তাহের নজর রাখছেন তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়ার দিকে। সে সব জানার পরেই তিনি নিজের অবস্থান নিয়ে মুখ খুলবেন।’’
তবে ইতিমধ্যেই নানা হিসেব নিকেশ শুরু হয়ে গিয়েছে। শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে দিলে জেলার কোন বিধানসভা কেন্দ্র কাদের দখলে থাকবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। শুভেন্দু শিবিরের দাবি, জেলার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রেই জয়-পরাজয় নির্ভর করছে শুভেন্দুর হাতে। তৃণমূল জেলা সম্পাদক কনিষ্ক পণ্ডা বলেন, ‘‘শুভেন্দুই জেলার সমস্ত এলাকায় একচেটিয়া জয় ছিনিয়ে নিতে পারবেন।’’
জেলার রাজনৈতিক মহলের হিসেব বলছে, নন্দকুমার, নন্দীগ্রাম, মহিষাদল, পশ্চিম পাঁশকুড়া, চণ্ডীপুর, ভগবানপুর, এগরা, খেজুরি, উত্তর ও দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা কেন্দ্রে শুভেন্দু শিবিরের অনেকটাই কর্তৃত্ব রয়েছে। এ ছাড়া হলদিয়া, তমলুক ও পূর্ব পাঁশকুড়ার সিপিএম বিধায়করাও শুভেন্দুর সঙ্গেই রয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের জল্পনা। ময়নার তৃণমূল বিধায়ক সংগ্রাম দলুই তো অনেক আগে থাকতেই শুভেন্দু অনুরাগী হিসেবে পরিচিত। রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি হলেও সেখানে শুভেন্দুর যথেষ্টই প্রভাব রয়েছে। রইল পটাশপুর। এখানে আবার বিজেপি-র ভাল প্রভাব। তাই সেখানেও শুভেন্দু ক্যারিশমা কাজ করবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।