ফাইল চিত্র।
কখনও বিকেলে, কখনও সন্ধ্যায়। তৃণমূল বিধায়ক ও দলের ব্লক সভাপতির কাছে ফোন করে জানতে চাওয়া হচ্ছে সাংবাদিক বৈঠক হয়েছে কিনা। কর্মিসভা হয়েছে কিনা। গ্রামে গিয়ে সভা হয়েছে কিনা। হয়ে থাকলে হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে পাঠাতে বলা হচ্ছে ওইসব কর্মসূচির ছবি। গত কয়েক দিন ধরে পি কে’র অফিস থেকে ফোন করে এ সব জানতে চাওয়ায় রীতিমত টেনশনে বিধায়ক থেকে ব্লক সভাপতিরা।
রাজ্যে লোকসভায় কয়েকটি জেলায় শাসক দল তৃণমূলের খারাপ ফলের প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের একাংশ সূত্রে খবর, এর পিছনে রয়েছে প্রশান্ত কিশোরের (সংক্ষেপে পিকে) ভূমিকা। গত ২৯ জুলাই ওই কর্মসূচি ঘোষণার পরে জেলা স্তরে ও বিধায়কদের সাংবাদিক বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। পূর্ব মেদিনীপুরে শাসক দলের দু’টি লোকসভা আসন অক্ষত থাকলেও সেখানেও এমন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। যদিও অভিযোগ উঠেছে, জেলায় সেই কর্মসূচি তেমন গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হচ্ছে না। আর সেই সূত্রেই বিধায়ক, ব্লক সভাপতিদের কাছে এমন ফোন অস্বস্তি বাড়িয়েছে।
‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি সফল করতে সাধারণ মানুষ যাতে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা ও মতামত জানাতে পারেন সেজন্য ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির বিষয়ে জানাতে বাসিন্দাদের কাছে ফোন নম্বর সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড বিলি এবং তাঁদের সমস্যা ও মতামত জানতে সভা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুরে এই কর্মসূচি ঠিকমত পালন হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খুটিনাটি জানতে চেয়ে নিয়মিত ফোন আসছে প্রশান্ত কিশোরের টিমের সদস্যদের কাছ থেকে। যে সব কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, প্রমাণ হিসেবে হোয়াটস অ্যাপে তার ছবি পাঠাতে বলা হচ্ছে। এই নিয়ে পরীক্ষার মুখে দলের ব্লক সভাপতিরা।
দলীয় সূত্রে খবর, পয়লা অগস্ট থেকে এমন ফোন আসছে। প্রথমদিকে জানতে চাওয়া হচ্ছিল সাংবাদিক সম্মেলন ও কর্মিসভা হয়েছে কিনা। এখন ফোনে জানতে চাওয়া হচ্ছে কোন এলাকায় কতজন কর্মীর বাড়ি যাওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীদের নিয়ে সভা হয়েছে কিনা। বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার পরে ওই কর্মসূচির ছবি পাঠাতে বলা হচ্ছে। এর ফলে কর্মসূচি পালনে কোনও ফাঁক থাকলে তা ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় উৎকণ্ঠায় অনেক তৃণমূল নেতাই।
জেলায় শাসকদলের অধিকাংশ বিধায়ক সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। তবে বেশ কিছু এলাকায় এখনও গ্রামবাসীদের নিয়ে সভা করে তাঁদের সমস্যা ও মতামত জানার কর্মসূচি পালন হয়নি বলে জানা গিয়েছে। পাঁশকুড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি দীপ্তিকুমার জানা বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই তিনবার ফোন এসেছে। পিকে’র অফিস থেকে বলছি পরিচয় দিয়ে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে কর্মসূচি পালন হচ্ছে কিনা। আগামীকাল গ্রামে গিয়ে সভা করা হবে।’’ ময়না ব্লকের সভাপতি সুব্রত মালাকার বলেন, ‘‘কখনও বিকেলে, কখনও সন্ধ্যায় পিকে’র অফিস থেকে বলছি জানিয়ে ফোন করে জানতে চাওয়া হচ্ছে কী কী কর্মসূচি পালন হয়েছে। তার ছবি পাঠাতে বলা হচ্ছে। রীতিমত পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।’’
তবে জেলা নেতাদের একাংশ আবার এই ফোনকল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ওই ফোন পিকে’র অফিস থেকেই করা হচ্ছে কিনা তা জানা যাচ্ছে না। কারণ পাল্টা ফোন করলে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ধন্দ তৈরি হয়েছে একাশ নেতাদের মনে। নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘পিকে’র অফিস থেকে বলছি জানিয়ে পাঁচবার পাঁচটি নম্বর থেকে ফোন এসেছে। নির্দেশমত কর্মসূচির ছবি পাঠিয়েছি। কিন্তু ওই ব্যক্তি সঠিক কিনা বোঝার উপায় নেই। ফলে যারা ফোন করে দলের কর্মসূচি জেনে নিচ্ছে বা প্রমাণ হিসেবে ছবি নিচ্ছে সে সব যথাযথ জায়গায় যাচ্ছে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছি। বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বেকেও জানানো হয়েছে।’’