এসএসসি ও টেট দুর্নীতির বিরুদ্ধে পথে এবিভিপি। শুক্রবার বেলদায়। নিজস্ব চিত্র।
তোমরা তো শুধু খেটেই গেলে!
স্ত্রীর কথার জবাব দিতে পারেননি দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। পার্টি অফিসে গিয়ে আরও কয়েকজন নেতার কাছে পেড়েছিলেন স্ত্রীর সেই কথা। দেখলেন তিনি একা নন। একই অবস্থা সতীর্থ নেতাদেরও। এক নেতা তো স্ত্রীয়ের কথার জ্বালায় এক বেলা বাড়িতেই যাননি। দুপুরে খেয়ে নিয়েছিলেন অন্যের বাড়িতে। এই ছবি গড়বেতার।
কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্য সভায় সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করে মানুষকে টেলিভিশনের খবর না দেখে ‘সিরিয়াল’ দেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পর ‘সিরিয়াল’ ছেড়ে টিভির খবরে মন সাধারণের। একই প্রবণতা খোদ শাসকদলের নেতা-কর্মীদের পরিবারেও। পার্থ ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা ও দামি দামি গয়না উদ্ধারে চোখ কপালে উঠছে নিচুতলার তৃণমূল নেতাদের স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্যদের। টিভির খবরে ট্রাঙ্ক ট্রাঙ্ক টাকা উদ্ধারের ছবি দেখে পরিজনদের প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হচ্ছেন সেইসব নেতা-কর্মীরা।
গড়বেতা ১ ব্লকের যে নেতা স্ত্রীর বিস্ময় ভরা কথার জবাব দিতে পারেননি, সেই নেতা বললেন, ‘‘কী যে বলি! সত্যিই তো আমরা তো নিঃস্বার্থভাবে খেটেখুটে তৃণমূলটা করি। কিছু নেতার পাপের ফল আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে। নিজের স্ত্রীর কাছে কী জবাব দেব!’’ গড়বেতারই এক তৃণমূল কর্মীর স্ত্রী বলেন, ‘‘সিরিয়াল দেখা বন্ধ করে টাকা উদ্ধারের খবর দেখছি। বেশ রোমাঞ্চ লাগছে। গ্রামের নেতা-কর্মীরা শুধু মিছিল-মিটিংই করে গেল। উপরের নেতারা গুছিয়ে নিচ্ছে। আমাদের উনি (স্বামী) এটাই বুঝতে পারছেন না। আমার লক্ষ্মীর ভান্ডারে যে টাকা ঢোকেনি সেটাও দেখার না কি সময় নেই!’’ গড়বেতার এক প্রবীণ নেতা নিজের বাড়িতে একই অবস্থার সম্মুখীন হয়ে একবেলা পার্টি অফিসেই কাটিয়েছিলেন। ওই নেতা বলেন, ‘‘টিভির খবর দেখে বাড়িতে শুধুই টাকা উদ্ধারের কথা হচ্ছে। স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের কথার চোটে পার্টি অফিসে গিয়ে একবেলা কাটিয়েছি। বন্ধুর বাড়িতে খেয়েছি।’’
চন্দ্রকোনা রোডের এক তৃণমূল নেতা বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক। বাড়িতে তাঁকেও শুনতে হচ্ছে কথা। ফোনে ওই নেতা বলেন, ‘‘খবর দেখে বাড়ির সবাই বলছে নেতা-মন্ত্রীরা যুগ যুগ ধরে দুর্নীতি করে বলে জানি, কিন্তু বুড়ো বয়সে এই ভীমরতি দেখে অবাক সকলেই। তাঁদের প্রশ্নবাণ সামলাতে জেরবার হচ্ছি।’’ গোয়ালতোড়ের অনেক তৃণমূল নেতা-কর্মীর বাড়ির লোকেরাও এখন সিরিয়াল ছেড়ে টিভির খবরে মন দিয়েছেন। এক যুব তৃণমূল নেতা তাঁর স্ত্রী ও বৌদিদের কথার জবাব দিয়ে বোঝাতে গিয়েছিলেন, ‘এসবই বিরোধীদের চক্রান্ত’। উল্টে তাঁকে শুনতে হয়েছে, ‘‘ঘর থেকে বস্তা বস্তা টাকা বেরোচ্ছে, আর বলছ বিরোধীদের চক্রান্ত! আমরা কি বুঝি না?’’ ওই যুব নেতার আক্ষেপ, ‘‘বাড়ির লোককেই বোঝাতে পারছি না। মানুষকে কী ভাবে বোঝাব!’’
তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘রবিবার জেলায় মিটিং ডেকেছি। পরের সপ্তাহ থেকে লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে অঞ্চল থেকে ব্লক স্তরে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উপর থেকে জিএসটি প্রত্যাহার, পেট্রল, গ্যাস-সহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ, একশো দিনের কাজে বকেয়া টাকা আদায়, বিরোধীদের চক্রান্ত প্রভৃতি বিষয়ে পথে নামবে দল।’’ বিজেপির জেলা সম্পাদক গৌতম কৌড়ির পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের কুকীর্তি তাঁদের বাড়ির লোকও জেনে যাচ্ছে। তাঁদেরই প্রশ্নের উত্তর দিতে খাবি খাচ্ছেন নেতারা। এ বার মানুষের প্রশ্নের মুখেও পড়বেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।’’