পশ্চিমে শুধু বাড়িতেই না কি কয়েক কোটির কাটমানি!

মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরে মেদিনীপুরে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর রোকাইয়া খাতুনের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সরকারি বাড়ি প্রকল্পের উপভোক্তারা।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৯ ০০:১৮
Share:

‘হাউস ফর অল’ প্রকল্পের একটি বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘বাংলার বাড়ি প্রকল্প থেকে ২৫ শতাংশ কমিশন দলের লোকেরা নিচ্ছে। আমি সব খবর রাখি। যাঁরা টাকা নিয়েছেন ফেরত দিন। চোরেদের আমি দলে রাখব না।’’

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরে মেদিনীপুরে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর রোকাইয়া খাতুনের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সরকারি বাড়ি প্রকল্পের উপভোক্তারা। কাটমানি ফেরত চেয়েই তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। স্থানীয় রাজেন বিবির দাবি, ‘‘কাউন্সিলর ৪৭ হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছে। এখনও বাড়ির কাজ শেষ করে দেয়নি।’’ একটা বাড়িতেই ৪৭ হাজার! বিরোধীদের দাবি, মেদিনীপুরেও সরকারি প্রকল্পগুলোয় কয়েক কোটি টাকার কাটমানি ‘লুকিয়ে’ রয়েছে। রোকাইয়ার অবশ্য দাবি, তাঁর নামে কুৎসা- অপপ্রচার করা হয়েছে।

শহরে ‘হাউজ ফর অল’ প্রকল্পে গরিব মানুষদের বাড়ি তৈরি হয়। বাড়ি পিছু খরচ হয় ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্র সরকার দেয় ১ লক্ষ ৫০ হাজার। রাজ্য সরকার দেয় ১ লক্ষ ৯৩ হাজার। আর উপভোক্তাকে দিতে হয় ২৫ হাজার। এ ছাড়া রাজ্য ও পুরসভা এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নে আরও ৩৬ হাজার ৮০০ টাকা করে ব্যয় করে। পুরসভা সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে মেদিনীপুরে বাড়ি তৈরি হয়েছে ১,৯৮১টি। আরও ১,০৯২টি বাড়ি তৈরি হওয়ার কথা। বিরোধীদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী ২৫ শতাংশ কমিশনের কথা উল্লেখ করেছেন। সেই হিসেবে না- গিয়ে যদি ধরে নেওয়া যায়, বাড়ি পিছু ২০ হাজার টাকাও কেউ বা কারা কাটমানি নেয়, তা হলেও টাকার অঙ্কটা দাঁড়াচ্ছে ৩ কোটি ৯৬ লক্ষ ২০ হাজার!

Advertisement

গ্রামের ছবিটাও কমবেশি এক। প্রশাসন সূত্রের খবর, বাংলার আবাস যোজনায় ২০১৭- ’১৮ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরে বাড়ি তৈরি হয়েছে ১৫,৬৭৯টি। বিরোধীদের বক্তব্য, গড়ে বাড়ি পিছু ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা কাটমানি দিতে হয়েছে উপভোক্তাকে। যদি তাই হয়, তাহলে এই প্রকল্পে কাটমানির পরিমাণ ১৫ কোটি ৬৭ লক্ষ ৯০ হাজার। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি হয়েছে ৯,৬৭১টি। বিরোধীদের অভিযোগ, ওই হিসেবে এ ক্ষেত্রে কাটমানির পরিমাণ ৯ কোটি ৬৭ লক্ষ ১০ হাজার।

বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে নানা ধরনের অভিযোগ ওঠে। এক, নির্দিষ্ট ঠিকাদার দিয়ে বাড়ি তৈরি করতে প্রভাবিত করা। দুই, নিম্নমানের মালপত্র ব্যবহার করা। তিন, নিয়ম না- মেনে বাড়ি তৈরি করা। চার, নির্দিষ্ট দোকান থেকে ইমারতি মালপত্র কিনতে বাধ্য করা। পাঁচ, ওই দোকান থেকে না- কিনলে বাড়ি তৈরির কিস্তির টাকা আটকে দেওয়ার ভয় দেখানো।

বিরোধীদের অভিযোগ, শুধু বাড়ি তৈরির প্রকল্পই নয়। শৌচাগার তৈরির প্রকল্পেও কাটমানি নেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরে জেলায় মিশন নির্মল বাংলায় শৌচাগার নির্মাণ হয়েছে ৪ লক্ষ ১৫ হাজার ৩০৭টি। এরমধ্যে গ্রামে ৪ লক্ষ ৪ হাজার ২৮৮টি। শহরে ১১ হাজার ১৯টি। এই প্রকল্পে শৌচাগারপিছু খরচ ১০ হাজার ৯০০ টাকা। এরমধ্যে উপভোক্তাকে দিতে হয় ৯০০ টাকা। শালবনির বালিজুড়ির লক্ষ্মী সিংহের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের নেতারা ৯০০ টাকা করে নিয়েছে। শৌচাগার করে দেয়নি।’’ কাটমানি নেওয়া হয়েছে একশো দিনের কাজের প্রকল্পেও। বিরোধীদের বক্তব্য, কাটমানির ভাগিদার অনেক। নীচ থেকে উপর পর্যন্ত পৌঁছয়। অনেক এলাকায় কাটমানির ‘রেট’ও বাঁধা। শহরে- গ্রামে বাড়ি তৈরির কাটমানি নেওয়ার কথা প্রায়শই শোনা যায়। তবে সচরাচর কেউ পুলিশে অভিযোগ করেন না। পাছে যদি বাড়ি তৈরি বন্ধ হয়ে যায়!

বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশ বলেন, ‘‘এমন বহু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা বাড়ি পাওয়ার কথা নয়। তাঁরাও এই প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন। শুধু বেশি কাটমানি দিয়েছেন বলেই।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণে বিজেপি মিথ্যা অভিযোগে দলের নেতা- কাউন্সিলরদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করাচ্ছে। মানুষকে ওরা বিভ্রান্ত করছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement