বেআইনি বাড়ি নিয়ে দিবাকর জানার বিরুদ্ধে বিজেপি’র পোস্টার। নিজস্ব চিত্র
কাটমানি ফেরত দেওয়া নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের পরেই তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে সরব আমজনতা। কাটমানির টাকা ফেরত চেয়ে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে চলেছে একাধিক জায়গায়। বেশ কিছু জায়গায় ‘কাটমানি’র টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছেন শাসকদলের নেতারা, এমন ছবিও দেখা গিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি দিবাকর জানার সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে অভিযোগ তুলে দলের জেলা সভাপতির কাছে নালিশ করেছিলেন তৃণমূলের আরেক নেতা তথা ওই পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব বর্মন। যা নিয়ে শোরগোল পড়েছিল জেলায়। এমনকী সমবায় সমিতির সরকারি জমিতে দিবাকর বাড়ি নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ তুলে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রীর কাছে শনিবার অভিযোগ জানিয়েছিলেন জয়দেব। তাঁর বিরুদ্ধে এ ভাবে সরব হওয়ায় দলে জয়দেবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দিবাকর। রবিবার ব্লক তৃণমূল কমিটির তরফে জরুরি ভিত্তিতে ডাকা বর্ধিত সভায় সেই জয়দেবের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য জেলা নেতৃত্বের কাছে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
তবে ওই বৈঠকে জয়দেবকে ডাকা হয়নি। তৃণমূল সূত্রে খবর, এ দিন সকালে কাঁকটিয়া বাজারে দলের ব্লক কার্যালয়ে তৃণমূলের ব্লক কমিটির সদস্য, ব্লকের সব জেলা পরিষদ সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান, অঞ্চল নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে ব্লক তৃণমূলের যুগ্ম আহ্বায়ক শরৎ মেট্যা, উত্তম সাহু এবং দিবাকর সহ অন্য নেতারা হাজির ছিলেন। আগামী ২১ জুলাই কলকাতা সমাবেশের প্রস্তুতির পাশাপাশি বৈঠকে জয়দেবের প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। ওই আলোচনাতেই দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে জয়দেবকে বহিষ্কারের জন্য জেলা নেতৃত্বের কাছে সুপারিশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এদিন বিকেলেই দলের জেলা নেতৃত্বের কাছে লিখিতভাবে তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক তৃণমূলের আহ্বায়ক শরৎ মেট্যা বলেন, ‘‘দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে দলের ব্লক নেতৃত্বকে না জানিয়ে জয়দেব সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলে দলের শৃঙ্খলা ভেঙেছেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য ব্লক কমিটির বর্ধিত বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য জেলা নেতৃত্বর কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।’’
দিবাকর বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে সংবাদ মাধ্যমে মুখে খোলা নয়, দলের ভাবমূর্তিও নষ্ট করেছেন জয়দেব। গত বিধানসভা এবং এ বার লোকসভা ভোটে দলবিরোধী কাজে যুক্ত ছিলেন। তাই দলের ব্লক কমিটি সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে জয়দেবকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য জেলা নেতৃত্বের কাছে সুপারিশ করেছে।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘এবিষয়ে সবদিক পর্যালোচনা করা হবে। এখন ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতিকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২১ জুলাইয়ের পরে ওই সব নিয়ে আলোচনা হবে।’’ ব্লক কমিটির বৈঠকে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ নিয়ে জয়দেব বলেন, ‘‘দিবাকরের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ জানিয়েছি তা থেকে সরছি না। জেলা নেতৃত্বের উপর আমার আস্থা রয়েছে। তাঁরা যা সিদ্ধান্ত নেবেন মেনে নেব।’’
এদিকে ২১ জুলাই সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে রবিবার তমলুকের নিমতৌড়িতে তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য, বিধায়ক, ব্লক সভাপতি, শহর সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী, জেলা কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দলীয় সূত্রে খবর, জেলার গ্রামীণ এলাকায় প্রতিটি অঞ্চল থেকে ২টি, পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে একটি করে বাসে করে দলীয় সমর্থকদের নিয়ে সমাবেশে যেতে বলা হয়েছে।