তমলুক আদালত থেকে বেরনোর পথে মিলন ভৌমিক। — নিজস্ব চিত্র।
পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার বিজেপি কর্মী বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়া খুনের ঘটনায় ধৃত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মিলন ভৌমিককে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল তমলুক জেলা দায়রা আদালত। বুধবার রাতে ময়নার বলাইপণ্ডায় মেয়ের বাড়ি থেকে মিলনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিলন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের স্বীকার।
সোমবার ময়নার গোড়ামহল গ্রামে খুন হন বিজেপির বুথ সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ। সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিজয়ের স্ত্রী লক্ষ্মী এবং ছেলে প্রসেনজিৎ। এই ঘটনার পর মঙ্গলবার লক্ষ্মী পুলিশের কাছে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। সেই তালিকায় রয়েছে মিলনের নাম। মৃতের পরিবারের দাবি, মিলন পরোক্ষ ভাবে খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। তাঁকে গ্রেফতার করে আসল হামলাকারী এবং খুনিদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে বলে বিজয়কৃষ্ণের পরিবারের অভিযোগ। নিহতের মেয়ের অভিযোগ, ‘‘মিলনকে গ্রেফতার করে আসলে সিবিআই তদন্তের দাবিকে ধামাচাপা দিতে চাইছে পুলিশ। বাকি দোষীরা ধরা না পড়া পর্যন্ত লড়াই চলবে।’’
তমলুকের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সরকার পক্ষের আইনজীবী সফিউল আলি খান বলেন, ‘‘ময়না থানার তদন্তকারী আধিকারিক বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়া খুনের মামলায় মিলন ভৌমিককে গ্রেফতার করে আজ পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করেন। ধৃতের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছায় আঘাত করা, অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা, খুন এবং মহিলাদের আঘাত করা ইত্যাদি ধারা যোগ করার আবেদন জানায় পুলিশ। সেই সঙ্গে তাঁকে ১৪ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার আবেদন করা হয়। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক সমস্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অতিরিক্ত ধারাগুলি যোগ করার আবেদন মঞ্জুর করেছেন।’’
যদিও আদালত থেকে বেরোনোর পথে মিলন দাবি করেছেন, ‘‘আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার সময় আমি কোনও ভাবেই ওই এলাকায় ছিলাম না।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘সোমবার ঘটনার সময় আমি বাকচা বাজারে ছিলাম। বাজার সেরে বাড়ি ফেরার পরে আমি এই ঘটনার কথা জানতে পারি।’’ মিলনের দাবি, ‘‘ময়নায় তৃণমূল করার অপরাধে এর আগেও আমার উপর বহু বার হামলা হয়েছে। তার পরেও আমি গোড়ামহল গ্রামে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী পঞ্চায়েত প্রতিনিধি। তারই শোধ তুলতে সুযোগ বুঝে আমার নাম বিজয়কৃষ্ণের খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা অভিযোগ করছেন তাঁরা যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম বা আমি কোনও ভাবে যুক্ত, তা হলে আমাকে যে সাজা দেওয়া হবে তা আমি মাথা পেতে নেব।’’
বিজয়কৃষ্ণের মৃত্যুর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে ময়নায় মিছিল করে বিজেপি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং ময়নার বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দা।