এই ভাবেই বাইক র্যালি করে নেতাই ঢুকেছিলেন শুভেন্দু। নিজস্ব চিত্র।
গত ৭ জানুয়ারি ছিল নেতাই দিবস। সে দিন লালগড়ের নেতাইয়ে তৃণমূল আর বিজেপির টক্কর দেখেছে রাজ্যবাসী। তৃণমূল নেতা ছত্রধর মাহাতোর হুঁশিয়ারি, কুড়মিদের ‘হুড়কা জামে’র মধ্যেও সে দিন সাতসকালে বিনা বাধায় নেতাই পৌঁছেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
কেন ঠেকাতে পারা গেল না শুভেন্দুকে? দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে এ বার সেই প্রশ্নের মুখেই পড়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো।
তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের জেলা নেতৃত্বের একাংশ ছত্রধরকে নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন। কারণ নিচুতলার কর্মীদের একটা অংশও প্রশ্ন তুলছেন, শুভেন্দুকে আটকানো হবে বলেও কেন শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যাওয়া হল? ওই দিন কুড়মিদের ‘হুড়কা জামে’ ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল কর্মীদের আটকে যাওয়ায় শাসকদলের অস্বস্তি আরও বেড়েছে।
নেতাই দিবসে শুভেন্দুকে আটকানোর বিষযে ছত্রধর নিজে দলকে আশ্বস্ত করেছিলেন। তৃণমূলের ‘উত্তরাধিকার’ নেতাই গ্রামে ‘মীরজ়াফর’ শুভেন্দুকে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। সে সব মাঠে মারা গিয়েছে। নেতাই দিবসে সকাল সাড়ে ৮টাতেই অনুগামী ও বিজেপি কর্মীদের দু’শো বাইকের র্যালির সঙ্গে গাড়ি নিয়ে নেতাইয়ে হাজির হন শুভেন্দু।
বিজেপি নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহিদ বেদি থেকে ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগানও দেন তিনি। ফেরার পথে অবশ্য লালগড়ের হাটচালায় শুভেন্দুকে উদ্দেশ্য করে দলীয় সভামঞ্চ থেকে কয়েকজন তৃণমূল কর্মী মাইক্রোফোনে ‘মীরজ়াফর শুভেন্দু দূর হটাও’ বলে স্লোগান দেন।
ওই দিন শুভেন্দু শালবনির পিড়াকাটা ও ভীমপুর হয়ে লালগড়ে এসেছিলেন। ওই পথেই ফিরেছেন। হুড়কা জামে তিনি আটকাননি। অথচ ওই রাস্তায় পরে তৃণমূলের নেতাদের গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। তাঁরা ঘুরপথে লালগড়ে আসেন। ওই দিন ঝাড়গ্রামের ডিয়ার পার্ক, সেবায়তন, মানিকপাড়াতেও অবরোধে আটকে পড়ে লালগড়ে যেতে পারেননি অনেক তৃণমূল কর্মী। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র ধেড়ুয়া ও দহিজুড়ি হয়ে লালগড়ে হাজির হন। ওই রাস্তায় ‘হুড়কা জাম’ ছিল না।
গত ডিসেম্বরের গোড়ায় মেদিনীপুরের জনসভা থেকে ছত্রধরকে জঙ্গলমহলে দলের মুখ হিসেবে তুলে ধরার বার্তা দিয়েছিলেন খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ছত্রধর নেতাই দিবসে শুভেন্দুকে আটকাতে না পারলেও দলীয় স্মরণসভায় শুভেন্দুকে একহাত নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমি ভূমিপুত্রদের কাছে আবেদন করছি, ওই ব্যাটাকে উচিত শিক্ষা দিন। জঙ্গলমহলের যেখানেই যাক, সেখানেই বিক্ষোভ দেখান।’’ ছত্রধরের এমন পিছুহটা বক্তব্যে অবশ্য অসন্তুষ্ট জেলা নেতাদের একাংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা বলেন, ‘‘শুভেন্দু দাপটের সঙ্গে নেতাইয়ে কর্মসূচি করায় দলের মুখ পুড়েছে। ছত্রধর তাঁকে আটকাতে পারেননি, এখন এলাকাবাসীকে সেই দায়িত্ব নিতে বলছেন। এ সব বলে বিরোধীদের হাতে সমালোচনার অস্ত্র তুলে দেওয়া হচ্ছে। কর্মীরাও মনোবল হারাচ্ছেন।’’
ছত্রধরের অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘‘ভীমপুরের হুড়কা জামে কিছু বিজেপির লোকজন ছিলেন। সেই কারণেই শুভেন্দু অবাধে লালগড়ে যেতে পেরেছেন। অথচ ওই পথ-সহ কয়েক জায়গায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদেরই আটকানো হয়েছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ কারণ অনুসন্ধান করে দলের নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’ কুড়মি সমন্বয় মঞ্চের তরফে যদিও এই ব্যাখ্যা অস্বীকার করা হয়েছে। মঞ্চের নেতা অশোক মাহাতো বলেন, ‘‘যে এলাকায় সংগঠনের লোকজন ছিলেন, সেখানেই অবরোধ হয়েছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া্ হয়নি।’’
এ প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলছেন, ‘‘শুভেন্দুদাকে জঙ্গলমহলের মানুষ ভালবাসেন। নেতাই দিবসে সেটা প্রমাণিত। আবারও শুভেন্দুদা ঝাড়গ্রামে আসছেন। ক্ষমতা থাকলে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করুন ছত্রধর। বাকিটা জঙ্গলমহলের মানুষ বুঝে নেবেন।’’
ছত্রধরের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আমি রাজনৈতিক ভাবে শুভেন্দুকে আটকানোর কথা বলেছি। এলাকায় ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়ে জনগণই উচিত পদক্ষেপ করবেন।’’