—প্রতীকী ছবি।
নির্ধারিত দিনক্ষণ মেনে জেলায় শুরু হল প্রথম দফায় পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন। প্রথম দিনের এই বোর্ড গঠন কার্যত শান্তিতেই মিঠেছে। কিন্তু কোথাও নির্দল, আবার কোথাও বিজেপির জয়ী পঞ্চায়েত সদস্যদের সমর্থনে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের একাংশের বিরুদ্ধে।
বুধবার ১০টি ব্লকের ৫৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপ-প্রধান নির্বাচন হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, দেশপ্রাণ ব্লকের সরদা গ্রাম পঞ্চায়েতে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে নির্দলদের সমর্থনে প্রধান এবং উপ প্রধান নির্বাচন করেছে দলের একাংশ। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ২১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ১৩টি। সাতটিতে জয়ী হয় নির্দল এবং একটি আসনে জয়লাভ করে বিজেপি। এ দিন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান হিসাবে নিতা মাইতি এবং উপপ্রধান হিসেবে আকবর আলি খানের নাম দলীয়ভাবে পঞ্চায়েত সদস্যদের কাছে প্রস্তাব করার জন্য নির্দেশ পাঠানো হয়। তবে সেই নির্দেশ অমান্য করে বিরোধী পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে জোট গড়ে সেখানে বোর্ড তৈরি করেন শাসক দলের টিকিটে জয়ী তিন পঞ্চায়েত সদস্য সদস্য। প্রধান নির্বাচিত হন তৃণমূলেরই ভবানী কর এবং উপপ্রধান নির্বাচিত হন সমীর পান্ডব। এ বিষয়ে দেশপ্রাণ ব্লক তৃণমূল সভাপতি রাজকুমার শীট বলেন, ‘‘দলীয় নির্দেশ অমান্য করে আমাদেরই তিনজন পঞ্চায়েত সদস্য নির্দলদের সঙ্গে জোট করে বোর্ড তৈরি করেছে। এ ব্যাপারে দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।’’
অন্যদিকে, বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যদের সমর্থনে তৃণমূলের জয়ী পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশের বিরুদ্ধে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে কাঁথি-৩ ব্লকের কানাইদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড দখলের অভিযোগ উঠেছে দলের অন্দরে। সেখানে দলের পঞ্চায়েত প্রধান এবং উপপ্রধানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করেন শাসকদলেরই পঞ্চায়েত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠরা। ওই পঞ্চায়েতে আসন সংখ্যা ২১টি। তৃণমূল পেয়েছে ১৫টি। বিজেপি চারটি, নির্দল একটি, সিপিআই একটি আসন পেয়েছে।
কাঁথি- ৩ ব্লকের তৃণমূলের সহ-সভাপতি অমৃতাংশু প্রধান বলেন, "আমরা সাতজন আজ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাইনি। আর বাকিরা বিজেপির সহায়তায় আজ বোর্ড গঠন করছেন।’’ তিনি এও বলেন, ‘‘দলের তরফে প্রথমে ঠিক হয়েছিল মধুমিতা পন্ডা প্রধান হবেন এবং শম্ভুরাম পাত্র উপপ্রধান হবেন। সেটা না মেনে বিজেপির সহায়তায় উমারানি ভঞ্জ গিরি প্রধান হয়েছেন আর শম্ভুরাম পাত্র উপপ্রধান হয়েছেন।’’ এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তরুণ মাইতি বলেন, ‘‘বিজেপির সহায়তা নিয়ে কোনও পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হয়নি। দলীয় নির্দেশ মেনে প্রধান এবং উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। কেন বাকি সদস্যরা এদিন অনুপস্থিত ছিলেন সে বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’
সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে আসায় তৃণমূলকে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি। এ প্রসঙ্গে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সহ সভাপতি অসীম মিশ্র বলেন, ‘‘কাটমানির ভাগাভাগি নিয়ে সব জায়গায় লড়াই করছে তৃণমূল। তার জন্য নিজেরাই বিভিন্ন জায়গায় দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। বিজেপি কোন জায়গাতেই তৃণমূলকে বোর্ড তৈরিতে সহায়তা করবে না।’’
হলদিয়া মহকুমার পাঁচটি ব্লকের মধ্যে মহিষাদল ব্লকে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত গঠন হয়েছে এ দিন।
চারটির মধ্যে তিনটিতে বোর্ড গঠন করেছে বিজেপি। সেগুলি হল ইটামগরা-২, বেতকুন্ডু, অমৃতবেড়িয়া। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে আটটিতে প্রধান ও উপ-প্রধান নির্বাচনের জন্য সভা ডাকা হয়েছিল। এর মধ্যে ধলহরা, খারুই-১, রঘুনাথপুর-১, রঘুনাথপুর-২ এবং বল্লুক-২, এই পাঁচটি গ্রামপঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধান নির্বাচিত হয়েছে। কাখর্দা ও খারুই-২, দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির প্রধান নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া বল্লুক-১ গ্রামপঞ্চায়েতে বিজেপির সমর্থনে একজন নির্দল সদস্য প্রধান নির্বাচিত হয়েছে। এগরা মহকুমায় প্রথম দফার ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল ১৬টি এবং একটি বিজেপির বোর্ড গঠন হয়েছে।
ভগবানপুর-১ ব্লকের ত্রিশঙ্কু গুড়গ্রাম পঞ্চায়েতে বাম সদস্যদের সমর্থনে বোর্ড গড়েছে তৃণমূল। এখানের ২৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১২টি ও বিজেপি ১১টি আসনে জয়ী হয়েছিল। বাম ও কংগ্রেস একটি করে আসন পায়। বাম ও কংগ্রেস সদস্যদের দলে টানার চেষ্টা করছিল তৃণমূল। গত সোমবার থেকে বাম সদস্য মনোরঞ্জন ভুইয়া বেপাত্তাও হয়ে যান। এ দিন ভোটাভুটির ওই বাম সদস্যের সমর্থনেই তৃণমূল বোর্ড গড়ে।