TMC

রেল-রাজনীতিতে তৃণমূলের অস্ত্র এ বার জাদুকর বরফি

বরফির ছবি সম্বলিত ব্যানারে ঝাড়গ্রাম শহর যুব তৃণমূলেরও দাবি, বিজেপি এক্সপ্রেস ট্রেন থামানো নিয়ে কৃতিত্ব দাবি করলেও, তা ছ’মাসেই তা হবে ‘ভ্যানিস’।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:০৯
Share:

সেই পোস্টার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

হাল্লার মন্ত্রী যুদ্ধের আগে ‘বরফি’ জাদুকরের সাহায্য নিয়েছিলেন। বিধানসভা যুদ্ধের আগে সেই বরফিকেই আশ্রয় করল শাসকদল তৃণমূল।

Advertisement

সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবিতে বরফির জাদু ছিল ক্ষণস্থায়ী। সে জাদুর সাহায্য নিয়ে উদ্দেশ্য সফল হয়নি হাল্লার মন্ত্রীর। বরফির ছবি সম্বলিত ব্যানারে ঝাড়গ্রাম শহর যুব তৃণমূলেরও দাবি, বিজেপি এক্সপ্রেস ট্রেন থামানো নিয়ে কৃতিত্ব দাবি করলেও, তা ছ’মাসেই তা হবে ‘ভ্যানিস’। ভোট পেরোলেই ঝাড়গ্রামে আর থামবে না এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি। সেই সঙ্গে পোস্টার-ব্যানারে লোকসভা ভোটের সময়ে বিজেপির প্রতিশ্রুতি মতো নয়াগ্রামে রেলপথ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম শহর যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি উজ্জ্বল পাত্র বলছেন, ‘‘শহরের মানুষজনকে বিজেপির মিথ্যাচারের বিষয়ে সতর্ক-সচেতন করতে পোস্টার-ব্যানারে বরফি চরিত্রটিকে রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।’’

শহর যুব তৃণমূলের এই নয়া প্রচার ভাবনায় রয়েছে অভিনবত্বের ছাপ। উজ্জ্বল নিজে পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার ভক্ত। জানালেন, বিধানসভার প্রচারে আগামী দিনে আরও এ ধরনের অভিনব বিষয় নিয়ে প্রচারে যাওয়া হবে। ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রাম জেলায় তৃণমূলের ফল খারাপ হয়েছিল। ২০১৯-র লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী ধরাশায়ী হন। বিজয়ী হন বিজেপির কুনার হেমব্রম। লোকসভা ভোটের সময়ে কুনারের সমর্থনে গোপীবল্লভপুরে প্রচারে এসে গোপীবল্লভপুর-নয়াগ্রাম-ওড়িশা নয়া রেলপথের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু কিছুই এগোয়নি। কুনার সাংসদ হওয়ার পরে বিভিন্ন মহল থেকে তাঁর কাছে ঝাড়গ্রামে মুম্বই-দিল্লি-পুরীগামী দূরপাল্লার একাধিক ট্রেনের দাবি করা হয়েছিল।

Advertisement

গত বছর ১৬ অক্টোবর টাটা-খড়্গপুর স্টিল এক্সপ্রেসটি বিশেষ ট্রেন হিসেবে চলাচল শুরু করে। কিন্তু আচমকা ৬ ডিসেম্বর সর্ডিহা স্টেশন থেকে ওই ট্রেনের স্টপ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। রেলের যুক্তি ছিল, সর্ডিহায় উপযুক্ত যাত্রী না হওয়ায় স্টপ তুলে দেওয়া হয়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব রেল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, টাটা-খড়্গপুর বিশেষ ট্রেনটি (সাবেক স্টিল এক্সপ্রেস) ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের সর্ডিহায় থামবে। সেই সঙ্গে হাওড়া-মুম্বই (সাবেক গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস), পুরী-দিল্লি (পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস) এবং পুরী-আনন্দবিহার (নীলাচল এক্সপ্রেস) এই তিনটি দূরপাল্লারা বিশেষ ট্রেন ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এই প্রথমবার ঝাড়গ্রাম স্টেশনে স্টপ দেবে। রেলের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সোমবার থেকে সর্ডিহায় স্টপেজ দিচ্ছে হাওড়া-টাটা বিশেষ ট্রেনটি। তিনটি দূরপাল্লার ট্রেনও মঙ্গলবার থেকে ঝাড়গ্রামে স্টপেজ দেওয়া শুরু করেছে।

তবে রেলের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগামী ছ’মাসের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে ওই ট্রেনগুলির স্টপ দেওয়া হয়েছে। এতেই সরব হয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের শাসকদলের অভিযোগ, ভোট ফুরোলে ট্রেনগুলি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সুব্রত সাহা বলেন, ‘‘ট্রেন নিয়ে বিজেপির মিথ্যাচারের রাজনীতির বিরুদ্ধে যুব নেতা-কর্মীরা বৃহস্পতিবার থেকে শহরে প্রচারে নামছেন।’’ ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রম অবশ্য বলছেন, ‘‘এটা রাজনীতি হলে রাজ্য সরকারের পাঁচ টাকার ডিম-ভাতও ভোটের রাজনীতি।’’ অন্য দিকে, নয়াগ্রামের রেলপথের বিষয়ে কুনারের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘রাজ্য জমি না দিলে রেললাইন কি আকাশে পাতা হবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement