দুই জেলা সভাপতিকে কলকাতায় আসতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
‘সকলকে এক হয়ে চলতে হবে। কারও সঙ্গে বিরোধ রাখা যাবে না। ঝগড়া করা চলবে না’। দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এমন স্পষ্ট বার্তাই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার দিঘায় দলীয় কর্মীদের সম্মেলনে গোষ্ঠীকোন্দল রুখতে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর তথা বিরোধী নেতার জেলাকে যে তিনি বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন চলতি সফরে একটানা চারদিন জেলায় থেকে তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্তত রাজনৈতিক মহলের এমনই ধারণা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সে কথা ভালভাবেই অনুভব করেছেন তৃণমূল নেত্রী নিজেই। প্রথমে প্রশাসনিক সভা এবং তারপরে দলীয় কর্মীদের নিয়ে সম্মেলন করেছেন। পাশাপাশি তৃণমূল নেত্রী জেলায় দলের দুই সভাপতি থাকার পরেও বাড়তি দায়িত্ব দিলেন ‘আস্থাভাজন’ দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে।
কাঁথি ও তমলুক—দুই সাংগঠনিক জেলা সভাপতিকে কলকাতায় ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। এমনিতেই পূর্ব মেদিনীপুরে সংগঠন দেখার দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্য তৃণমূলের দুই সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এবং তন্ময় ঘোষ। তবে কি পঞ্চায়েত ভোটের আগে পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের সংগঠন সামলানোর জন্য রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হল! স্বাভাবিকভাবেই এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
৩ এপ্রিল থেকে টানা চার দিনের পূর্ব মেদিনীপুর সফরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার দিঘায় দুই সংগঠনিক জেলার কর্মীদের নিয়ে সম্মেলন করেন মমতা। সেখানে প্রতিটি বুথ থেকে কমপক্ষে ১৫ জন সক্রিয় কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। সেখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাঁথি এবং তমলুক সংগঠনিক জেলার দুই সভাপতিকে কলকাতায় তলব করেন। বলা হয়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গে দেখা করতে। নেত্রী কলকাতায় ফিরে যাওয়ার পর দুই জেলা সভাপতিকে রাজ্য সভাপতির সঙ্গে ফোনে কথা বলতে হবে। তারপরেই তাঁদের কলকাতায় ডেকে পাঠানো হবে বলে দলীয় সূত্রে খবর। এ বিষয়ে বিধায়ক তথা কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তরুণ মাইতি বলেন, ‘‘দুজন জেলা সভাপতিকে নিয়ে কলকাতায় পৃথকভাবে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী যাতে কথা বলেন সেরকমই নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী। দিনক্ষণ দুই জেলা সভাপতিকে চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে। যেহেতু সৌমেনবাবু প্রবীণ। তাই উনি যেদিন চূড়ান্ত করবেন সেদিনই রাজ্য সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করব।’’
২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে ঘাসফুল শিবিরের ভরাডুবি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরে। ১৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৭টি হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। এমনকী নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে হেরে যান মমতা। এরপরই শুভেন্দুর জেলায় দলের সংগঠন সামলানোর দায়িত্ব প্রথমে দেওয়া হয় তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ঘোষকে। পরবর্তী কালে নন্দীগ্রাম সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কয়েকটি এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হয় আরেক রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষকে। দুজনেই অভিষেক ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। সম্প্রতি কালীঘাটে রাজ্যের সমস্ত জেলার নেতৃত্বদের নিয়ে দলীয় বৈঠকে পূর্ব মেদিনীপুরে সংগঠন দেখার জন্য মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলে শোনা গিয়েছিল। যদিও দলগতভাবে এখনও পর্যন্ত সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। এই অবস্থায় জেলার দুই সাংগঠনিক জেলা সভাপতিকে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গে বৈঠকে বসার যে নির্দেশ তৃণমূল নেত্রী দিয়েছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিরোধী দলনেতার জেলায় দলের দুই জেলা সভাপতিকে তৃণমূল নেত্রীর এমন নির্দেশ নিয়ে কটাক্ষ ছুড়েছে বিজেপি। দলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সৌমেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘ওখানে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। তাই গোটা রাজ্য থেকে যদি ফুটবল টিম পাঠানো হয় তাতেও পূর্ব মেদিনীপুরে কিছুই লাভ করতে পারবে না তৃণমূল। এখানকার মানুষ রাষ্ট্রবাদী রাজনীতিকেই সমর্থন করে।’’
তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র অবশ্য বলছেন, ‘‘দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে সকলের সঙ্গে কথা বলার জন্য নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন ঠিক। তবে রাজ্য সভাপতিকে পূর্ব মেদিনীপুরের সংগঠন দেখার জন্য বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কিনা সেটা বলতে পারব না।’’