—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP
আসন্ন ভোট যুদ্ধে শামিল এক ঝাঁক পরিবার!
কেউ সপরিবারে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন, তো কেউ আবার ভোট ময়দানে আনকোরা স্ত্রী-কন্যার রণকৌশলের ‘ব্লু-প্রিন্ট’ তৈরিতে ব্যস্ত। গড়বেতার তিনটি ব্লকেই বিরোধী শিবিরে একই পরিবার থেকে অনেকেই প্রার্থী হওয়ায় খোঁচা দিচ্ছে শাসকদল তৃণমূল।
গড়বেতা ৩ (চন্দ্রকোনা রোড) ব্লকের শঙ্করকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন নমিতা রুইদাস। তিনি বিজেপির এসসি মোর্চার রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মদন রুইদাসের স্ত্রী। তাঁদের মেয়ে মনীষা রুইদাস গড়বেতা ১ ব্লকের ধাদিকা পঞ্চায়েতের একটি আসনে পদ্ম প্রার্থী। স্ত্রী-মেয়েকে ভোট ময়দানে নামিয়ে মদন রুইদাস রণকৌশল তৈরিতে ব্যস্ত। একুশের বিধানসভা ভোটে গড়বেতা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন মদন। তৃণমূলের কাছে হেরেছিলেন অল্প ব্যবধানে। মদন বলছেন, ‘‘সরাসরি ভোটে এই প্রথম আমার স্ত্রী ও মেয়ে। মনোনয়ন থেকে প্রচার কৌশল— আমিই সামলাচ্ছি।’’
গড়বেতা ৩ ব্লকের একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রার্থী বিজেপির রাজ্য নেতা ধীমান কোলের স্ত্রী সোনালি কোলে। যিনি ২০১৩ ও ২০১৮ পঞ্চায়েত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন। গতবার পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল প্রার্থীর কাছে মাত্র ১১৮ ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন সোনালি। এ বার? সোনালি বলেন, ‘‘গতবার অল্প ব্যবধানে হারলেও, এ বার জিতবই।’’ তাঁর স্বামী জেলা বিজেপির বহু যুদ্ধের সৈনিক ধীমান কোলে দু’বার করে পঞ্চায়েত ও বিধানসভা ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। একবার জেলা পরিষদে পদ্ম প্রতীকে দাঁড়িয়ে জিতেওছিলেন। ধীমান বলছেন, ‘‘আমার সঙ্গে স্ত্রীও বরাবর রয়েছেন রাজনীতির অঙ্গনে। তাঁর ভোটে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে। গতবার দলের অন্যত্র প্রচারে থাকায় ওঁর হয়ে নামতে পারিনি। এলাকার মানুষকে নিয়ে এ বার আমরা একসঙ্গে প্রচার করব।’’
চন্দ্রকোনা রোডেই জেলাপরিষদের একটি আসনে পদ্ম প্রার্থী হয়েছেন বিজেপির এসসি মোর্চার জেলা সাধারণ সম্পাদক দীপক মণ্ডলের স্ত্রী রিনা মণ্ডল। গড়বেতা ২ (গোয়ালতোড়) ব্লকের একটি জেলাপরিষদ আসনে বিজেপি প্রার্থী করেছে শ্বেতা হাটুইকে। তাঁর স্বামী উজ্জ্বল হাটুই বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য। উজ্জ্বল আমলাশুলি গ্রাম পঞ্চায়েতে দলের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রী এই প্রথম ভোটে লড়ছে। আমরা তো একসঙ্গেই প্রচার করছি। মানুষের সমর্থনও পাচ্ছি।’’ গড়বেতা ১ ব্লকের আমলাগোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে বিজেপির প্রার্থী দলের এসসি মোর্চার জেলা সহ-সভাপতি আনন্দ রায়। তাঁর স্ত্রী সাথী আহিররায় এই পঞ্চায়েতেই একটি আসনে পদ্ম প্রার্থী হয়েছেন। এই ব্লকের আমকোপা অঞ্চলে পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন মৌসুমী রায়। যিনি দলের এসসি মোর্চার জেলা সম্পাদক অরুণ রায়ের স্ত্রী।বাম শিবিরের ভোটেও পারিবারিক ছায়া। গড়বেতা গ্রাম পঞ্চায়েতে স্ত্রী ও কন্যা-সহ সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন বামাপদ খাঁড়া। তিনি ও তাঁর স্ত্রী মানা খাঁড়া পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁদের মেয়ে সবুজ খাঁড়া গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে সিপিএমের প্রার্থী। এই গ্রাম পঞ্চায়েতেই প্রার্থী হয়েছেন এক সিপিএম দম্পতি। চড়কডাঙা সংসদে প্রার্থী সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্য দেবব্রত সিংহ, পাশের হাইস্কুলপাড়া সংসদে প্রার্থী তাঁর স্ত্রী এবিটিএ নেত্রী সোনালি সিংহ ভট্টাচার্য। বামাপদ ও দেবব্রত বলেন, ‘‘আমরা সবাই মিলেই দেওয়াল লিখন করে প্রচারে নেমে পড়েছি। হাল ফেরাতে পার্টির প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়ছে।’’
তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘এত প্রার্থী পাবেই বা কি করে? তাই প্রার্থিপদ পূরণে নেতা-কর্মীদের স্ত্রী, ছেলেমেয়েদেরকেও নামাতে হচ্ছে।’’