৬৮ নম্বর বুথের নারায়ণচন্দ্র বেরার বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
গ্রাম রয়েছেন একই নামের দুই ব্যক্তি। নামের সেই সাদৃশ্যকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য বরাদ্দ টাকা অন্য ব্যক্তিকে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। নন্দকুমার ব্লকের কুমরচক গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই ঘটনায় বিডিও’র কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন বঞ্চিত উপভোক্তা পরিবার এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, কুমরচক গ্রামের ৬৮ নম্বর বুথের বাসিন্দা বৃদ্ধ নারায়ণচন্দ্র বেরা পেশায় দিনমজুর। তাঁর বাবার নাম ভূষণচন্দ্র বেরা। নারায়ণবাবুদের চাষ জমি নেই। স্ত্রীকে নিয়ে পারিবারিক তিন ডেসিমেল জমিতে এক চিলতে কুঁড়ে বাড়িতে থাকেন তিনি। ওই গ্রামেরই ৭০ নম্বর বুথে নারায়ণচন্দ্র বেরা নামে আরও এক ব্যক্তি থাকেন। তাঁর বাবার নাম ভানু বেরা। ওই নারায়ণের একতলা পাকাবাড়ি ছাড়াও রয়েছে জমি, পানের বোরোজ। তিনি স্থানীয় সমবায় সমিতির পরিচালন সমিতির সদস্য হিসাবে রয়েছেন।
২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি তৈরির জন্য ৬৮ নম্বর বুথের নারায়ণবাবুর নাম উপভোক্তা তালিকায় স্থান পায়। ওই প্রকল্পে তাঁর ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। এ জন্য ব্লক প্রশাসন থেকে সব তথ্য যাচাই করে নারায়ণবাবুর ব্যাঙ্ক আকাউন্ট নম্বর নেওয়া হয়। ওই গ্রামের আরও তিনটি পরিবারের নাম প্রাপক তালিকায় ছিল। অভিযোগ, প্রকল্পের কিস্তির ৪৫ হাজার টাকা ঢুকেছে ৭০ নম্বর বুথের নারায়ণবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
৬৮ নম্বর বুথের নারায়ণবাবু বলেন, ‘‘কিছুদিন আগে গ্রামেরই অন্য তিনটি পরিবারের প্রথম কিস্তির ৪৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা জানতে পারি। কিন্তু অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা জমা পড়েনি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার নামে গ্রামের অন্য এক ব্যক্তি টাকা পেয়েছেন। এ বিষয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যকে জানাই। এবং বিডিওর কাছে অভিযোগ করেছি।’’
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য গোপালকৃষ্ণ বেরার অভিযোগ, ‘‘গ্রামের অন্য বুথের যে নারায়ণচন্দ্র বেরা টাকা পেয়েছেন, তাঁর এখনই পাকা বাড়ি রয়েছে। আবাস যোজনার উপভোক্তা তালিকায় তাঁর নামও ছিল না। বাবার নামও আলাদা। একই নামের সুযোগ নিয়ে ওই ব্যক্তিকে পঞ্চায়েতের পরিচালনায় থাকা তৃণমূল নেতৃত্ব টাকা পাইয়ে দিয়েছে। দুর্নীতির ঘটনা জানতে পেরে গত ৩১ অক্টোবর বিডিও’র কাছে অভিযোগ জানিয়ে তদন্তের দাবি করেছি।’’ উল্লেখ্য, গোপাল বাম সমর্থিত নির্দল।
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই নারায়ণ বেরা টাকা তোলার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে আমাকে ডেকে আবাস যোজনায় নাম থাকার কথা জানানো হয়। আমি বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছি। তবে এটা অন্য কারও পাওয়ার কথা ছিল কি না, জানা নেই।’’ দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে কুমরচক গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান বাসুদেব মন্ত্রী বলেন, ‘‘একই নামের জন্য ভুলবশত এটা হয়েছে। আমরা জানতে পেরে টাকা ফেরানোর জন্যও ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’
ওই কাণ্ডে তদন্ত শুরু হয়েছে। নন্দকুমারের বিডিও মহম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করেছি। দেখা গিয়েছে, উপভোক্তাদের তালিকায় থাকা ব্যক্তি টাকা না পেয়ে অন্য একজন পেয়েছেন। এটা ভুলবশত হয়েছে, না ইচ্ছাকৃত, তা জানতে গ্রাম পঞ্চায়েতে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।’’