হামলার পর সুশান্ত দাসের বাড়ি। মঙ্গলবার খেজুরিতে। ছবি: সোহম গুহ।
দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকাতে বারবার কর্মীদের সতর্কবার্তা দিচ্ছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু সেই বার্তা যে সর্বত্র পৌঁছচ্ছে না, ফের তার প্রমাণ মিলল পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে।
তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দলের জেরে মঙ্গলবার দিনভর তেতে রইল খেজুরির মালদা গ্রাম। উঠল স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িতে ভাঙচুর, বোমাবাজি, শূন্যে গুলি চালনার অভিযোগও। তবে কেউ হতাহত হয়নি। পুলিশেও অভিযোগ দায়ের করেনি কোনও পক্ষ।
তৃণমূল অন্দরের খবর, খেজুরিতে এলাকার বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডলের সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাসের। এলাকার দখল নিয়ে এই দুই গোষ্ঠী প্রায়ই নানা সংঘাতে জড়ায়। আদতে খেজুরির বাসিন্দা রণজিৎবাবু জেলা রাজনীতিতে তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। থাকেনও কাঁথিতে। শুভেন্দু অবশ্য বলেন, ‘‘ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। এটা গ্রাম্য বিবাদ। পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, মাস তিনেক আগে দুই তৃণমূল নেতার অনুগামীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। সেই ঘটনায় পাথর্প্রতিম রায়ের তিন অনুগামী জামিন পান। দু’পক্ষের বাকি অভিযুক্তরা অধরা। সোমবার রাত দেড়টা নাগাদ মালদা গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় সেই অভিযুক্তদেরই ধরতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, ঠিক সেই সময়ই মালদা উত্তরপাড়ায় রণজিৎ-ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে হামলা চালান পার্থপ্রতিমের অনুগামী তথা প্রাক্তন তৃণমূল অঞ্চল সম্পাদক শুভ্রাংশু দাস। শুভ্রাংশুও হাতাহাতির পুরনো মামলায় অভিযুক্ত এবং পুলিশের খাতায় ‘পলাতক।’ সেই সময় বোমাবাজি, শূন্যে গুলি ছোড়ার অভিযোগ ওঠে শুভ্রাংশু ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে।
শুভ্রাংশুকে ধরার দাবিতে এবং দলের কর্মীদের বাড়িতে পুলিশি তল্লাশির প্রতিবাদে মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে পথ অবরোধ শুরু করেন রণজিৎ-অনুগামীরা। অবরোধে নেতৃত্ব দেন তৃণমূলের বর্তমান অঞ্চল সভাপতি রামকৃষ্ণ দাস। তাঁর অভিযোগ, ‘‘শুভ্রাংশু পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে এ ভাবে হামলা চালাল, অথচ পুলিশ ব্যবস্থাই নিল না। উল্টে, পুলিশ রাতে তল্লাশির নামে সাধারণ বাসিন্দাদের হেনস্থা করেছে। এর প্রতিবাদেই অবরোধ।’’
গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, বেলা ১১টা নাগাদ শুভ্রাংশু ফের দলবল নিয়ে উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিধায়কের অনুগামী সুশান্ত দাস নামে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে হামলা চালান। এরপরই রণজিৎ-ঘনিষ্ঠেরা শুভ্রাংশুর বাড়িতে হামলা চালান, এমনকী, তাঁর স্ত্রী ও মাকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। শুভ্রাংশুর মা সবিতাদেবীর কথায়, ‘‘শুভ্রাংশু অনেকদিন ঘরছাড়া। অথচ, সে না কি গ্রামে এসে হামলা চালাচ্ছে! এ জন্য আবার কয়েক জন এসে আমাদের বাড়িতে হামলা চালাল!’’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পৌঁছন খেজুরির বিধায়কও। বিকেল ৩টে নাগাদ অবরোধ ওঠে। তবে দীর্ঘ ন’ঘণ্টার অবরোধের জেরে সমস্যায় পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। যানজটে নাকাল হন নিত্যযাত্রীরা।
শাসক দলের দু’টি গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের মাসুল সাধারণ মানুষ দেবেন কেন? বিধায়কের জবাব, ‘‘গ্রামে পুলিশি তল্লাশির বিরুদ্ধে ক্ষোভ হয়েছিল। তার জেরেই অবরোধ। এর সঙ্গে আমাদের দলের সম্পর্ক নেই।’’ পক্ষান্তরে, পার্থপ্রতিম বলেন, ‘‘আমি এখন খেজুরির বাইরে। দলে এখন অনেক লোক। কে, কোথায়, কী করছে সেটা জানি না।’’ জেলার পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈনের দাবি, সোমবার রাতে অভিযুক্তদের খুঁজতে গ্রামে গিয়েছিল পুলিশ। বাসিন্দাদের হেনস্থার অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন পুলিশ সুপার।