Suvendu Adhikari

বোর্ড গঠন, শুভেন্দুর মন্তব্যে সতর্ক তৃণমূল

প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি পঞ্চায়েত সমিতির বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে তাঁদের বিজয়ী শংসাপত্র ব্লকের দলীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩ ০৯:০০
Share:

শুভেন্দু অধিকারী।

'মালের দায়িত্ব আরোহীর’। পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর এমন মন্তব্য ঘিরে জল্পনা ছড়িয়েছে। আদতে কৌতুকপূর্ণ মন্তব্য হলেও এর তাৎপর্য নিয়ে যথেষ্ট সাবধানী নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

রবিবার নিজের বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামে বাসুলিচকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে নন্দীগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে তার জবাব দিতে গিয়েই এমন মন্তব্য করেন তিনি। আর তারপরই আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করেছেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতৃত্ব। এমনই খবর তৃণমূল সূত্রে। যদিও প্রকাশ্যে এমন মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ নন্দীগ্রামের‌‌‌ ব্লক তৃণমূল সভাপতির দাবি, ‘‘বোর্ড গড়বে তৃণমূলই।’’ কিন্তু সূত্রের খবর, এদিন সকালে বিরোধী দলনেতার ওই মন্তব্যের পর পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্বাচিত দলের প্রতিটি সদস্যর উপর নজর রেখেছে তৃণমূল।

৩০ সদস্যের পঞ্চায়েত সমিতিতে পদ্ম ও ঘাসফুল দুই শিবিরই সমসংখ্যক অর্থাৎ ১৫টি করে আসন পাওয়ায় লটারি কিংবা টস মারফৎ বোর্ড গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিকল্প উপায় হল, বিপরীত দল থেকে এক বা একাধিক সদস্যকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসা। আর এখানেই চিন্তা দুই শিবিরে। এ দিন বিরোধী দলনেতার সেই সম্ভাবনাকেই যেন উসকে দিয়েছে। বিরোধী দলনেতা বলেন, "আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। ১৫ জনই একসাথে আছি। আশা করি ওদের ১৫ জনও একসাথে থাকবেন। ওদের ১৫ জন এক সাথে থাকবেন কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব তো আমাদের নয়। মালের দায়িত্ব আরোহীর।" বিরোধী দলনেতার হাসির সঙ্গে এমন মন্তব্য ও তার সঙ্গে শরীরী ভাষা যথেষ্ট 'অর্থবহ' বলে দাবি করেছেন নন্দীগ্রামের এক তৃণমূল নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষটি শুভেন্দু অধিকারী। এবং তিনি যে চুপচাপ বসে নেই এই মন্তব্য থেকে সেটাই মনে হচ্ছে। তাঁর এই মন্তব্যকে লঘু করে দেখা রাজনৈতিক আত্মহত্যার সামিল হবে। দলের উচিত বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা। আমি আমার এলাকায় দলের প্রতিটি বিজয়ী সদস্যকে লোভহীন ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বলেছি।’’

Advertisement

কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্য কি নেহাতই কথার কথা! নাকি সত্যিই কোনও ইঙ্গিত বহন করছে! এক তৃনমূল নেতার দাবি, ‘‘আমাদের দুই জয়ী সদস্যকে ইতিমধ্যেই বিজেপিতে যোগ দেওয়ার লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সুতরাং বিজেপি দলবদল করাতে যে মরীয়া তা বলাইবাহুল্য।’’ দাউদপুর এলাকা থেকে পঞ্চায়েত সমিতির বিজয়ী তৃণমূল সদস্যা কাশ্মীরা বিবি দাবি করেছেন, "আমাকে বিজেপির তরফে বলা হয়েছে যে তাদের দলে যোগ দিলে গুরুত্বপূর্ণ পদ ছাড়াও ২৫-৩০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু আমি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি।"

যদিও বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক মেঘনাদ পালের দাবি, "কোনও উৎকোচ নয়। উন্নয়ন ও গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে যদি কেউ আমাদের সাথে কাজ করতে চান তো আমরা তাঁকে দলে নেব না! নন্দীগ্রামে সেই বাস্তবতা তো একশো শতাংশ। এখন থেকেই তৃণমূল যেভাবে তাদের জয়ী সদস্যদের শংসাপত্র কেড়ে নিচ্ছে তাতে আমার মনে হচ্ছে ওদের একাধিক জয়ী প্রার্থী দলের ওপর ক্ষুব্ধ। বোর্ড বিজেপিই গঠন করবে।"

প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি পঞ্চায়েত সমিতির বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে তাঁদের বিজয়ী শংসাপত্র ব্লকের দলীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। তৃণমূল কর্মীদের একাংশের যাবি, পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীদের সিংহভাগ তাঁদের বিজয়ীর শংসাপত্র দলের ব্লক অফিসে জমা রেখেছেন। তৃণমূলের নন্দীগ্রাম ব্লক ১ সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ অবশ্য দাবি করেন, "ওঁকে (শুভেন্দু অধিকারী) গুরুত্ব দিচ্ছি না। উনি অনেক বড় বড় কথা বলেন যা বাস্তবে কার্যকর করার ক্ষমতা ওঁর নেই। এবারও উনি কিছু করতে পারবেন না। বরং বোর্ড আমরাই গড়তে চলেছি। কী ভাবে বোর্ড গঠন করব সেটা ওদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া গতি নেই।"

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement