Teachers' Protest

আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার প্রশান্তের স্মরণসভায়

অসুস্থ হয়ে বুধবার দুপুরে তমলুকের এক হাসপাতালে মারা যান প্রশান্ত। তাঁর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের শ্যামপুর জলপাইয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৪৫
Share:

শ্রদ্ধা: শিক্ষক প্রশান্ত দাসের স্মরণসভায় অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শুক্রবার, ওয়াই চ্যানেলে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

পুরো প্যানেল বাতিল হলে মৃত্যু ছাড়া তাঁর আর কোনও পথ থাকবে না। ‘২০১৬ যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এ বসে সহকর্মীদের এ কথাই বলেছিলেন শিক্ষক প্রশান্ত দাস (৩৮)। শুক্রবার প্রশান্তের স্মরণসভায় এ কথা জানালেন তাঁর সহকর্মীরা।

Advertisement

অসুস্থ হয়ে বুধবার দুপুরে তমলুকের এক হাসপাতালে মারা যান প্রশান্ত। তাঁর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের শ্যামপুর জলপাইয়ে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপের মহেন্দ্রগঞ্জ হাইস্কুলে ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন প্রশান্ত। ২০১৯ সালে প্রথমে উচ্চ প্রাথমিকে চাকরি পান। পরে তিনি সাগরদ্বীপের ওই স্কুলে যোগ দেন। প্রশান্ত ‘২০১৬ যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর তরফে ওয়াই চ্যানেলে বিক্ষোভে বসে টানা আন্দোলন করেছেন। ২ জানুয়ারি বিকাশ ভবনের অভিযানেও ছিলেন। বাড়ি ফিরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ পরিজনেরা। প্রশান্তের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসীও। প্রশান্তের স্ত্রী ঝুমা দাস বর্মণ বলেন, ‘‘চাকরির ভবিষ্যৎ নিয়ে সব সময়ে দুশ্চিন্তা করতেন। খেতে চাইতেন না। বলতেন, ‘আমার চাকরির কী হবে!’ ২ জানুয়ারি হঠাৎ পেটে ব্যথা, বমি-পায়খানা শুরু হয়। ওঁকে তমলুকে নিয়ে যাই। সেখানেই মারা যান।’’ প্রশান্তের একমাত্র মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলেকে হারিয়ে মা গায়ত্রী দাস বলেন, ‘‘চাষজমি বিক্রি করে ছেলেকে পড়িয়েছি। সেই ছেলে চলে যাবে, ভাবতে পারিনি।’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার থেকে প্রশান্তের স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হলেও তাঁর মৃত্যুতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুভাষ বর বলেন, ‘‘ভাল মনের মানুষ ছিলেন। অসুস্থতা ছাড়া স্কুল কামাই করতেন না। বার্ষিক ক্রীড়ার দায়িত্ব নিতেন।’’

শুক্রবার ওয়াই চ্যানেলে প্রশান্তের স্মরণসভায় এক শিক্ষক বলেন, ‘‘প্যানেল বাতিল হলে কী হবে, তাঁকে এই দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছিল। প্রশান্তের মনে দুশ্চিন্তা, অবসাদ জমে ছিল। সেই কারণেই তাঁর অসুস্থতা আরও বাড়ে।’’ শিক্ষকেরা জানান, প্রশান্ত যে ভাবে তাঁদের আন্দোলনে জড়িয়ে ছিলেন, আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যেতে সে ভাবেই সবাইকে থাকতে হবে।

আর এক শিক্ষক হুমায়ুন ফিরোজ মণ্ডল বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের কাছে অযোগ্যদের তালিকা থাকা সত্ত্বেও কেন প্যানেল থেকে তাঁদের বাদ দেওয়া হচ্ছে না? এসএসসি-র আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে সব তথ্য ঠিক ভাবে তুলে ধরছেন কি? উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তায় প্রেশার এবং সুগার বেড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রশান্তের। এ রকম চললে মৃত্যু-মিছিল দেখতে হতে পারে।’’ এ দিন স্মরণসভার একটু পরেই মিতালি রায় নামে এক শিক্ষিকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি একাদশ ও দ্বাদশের সংস্কৃতের শিক্ষিকা। তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement