জয়ের শংসাপত্র হাতে হসিনুদ্দিন। নিজস্ব চিত্র
কেশপুরের কলাগ্রামের উঁচাহারে গ্রাম পঞ্চায়েতে জিতেছেন তৃণমূলের শেখ হসিনুদ্দিন। জয়ের শংসাপত্রও পেয়েছেন তিনি। সূত্রে খবর, সেই শংসাপত্রে পঞ্চায়েতের রিটার্নিং অফিসার বা প্রিসাইডিং অফিসারের সিল নেই। কেন নেই, সেই নিয়ে দলের ভেতরে, বাইরে জল্পনা তুঙ্গে। কমিশন সূত্রের দাবি, এটা নিছকই ভুল। আর কেশপুরের বিডিও তথা এখানকার পঞ্চায়েত রিটার্নিং অফিসার দীপক ঘোষ বলেন, ‘‘গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে কিছু শংসাপত্রে হয়তো সিল পড়েনি। দিয়ে দেওয়া হবে।’’
ভোটে হসিনুদ্দিনকে নিয়ে কম চর্চা হয়নি। গত ফেব্রুয়ারিতে কেশপুরে এসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন তৃণমূলের পঞ্চায়েতের ‘মুখ’ কারা, জনসভা থেকে বুঝিয়েছিলেন। সেই সভামঞ্চে হসিনুদ্দিনকে তুলে অভিষেকের প্রশ্ন ছিল, ‘‘এই লোকটিকে দেখে কি মনে হয় দুর্নীতিগ্রস্ত? চোর? এই হসিনুদ্দিনবাবুর মতো লোকই আগামী দিনে পঞ্চায়েতের মুখ হতে চলেছে।’’ তারপর উঁচাহারে তৃণমূলের প্রার্থী হন হসিনুদ্দিন। প্রতিপক্ষ ছিলেন কংগ্রেসের আব্দুল জব্বর মল্লিক। এই তৃণমূলকর্মী দলের প্রতীক না পেয়ে ‘হাত’ ধরেছিলেন। তবে ভোট গণনার দিন জব্বরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কলাগ্রাম পঞ্চায়েত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন ১৯টি আসনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মাত্র ৩টিতে। এর মধ্যে উঁচাহারের আসন একটি। হসিনুদ্দিন এখানে জিতেছেন মাত্র ২১ ভোটে। তিনি পেয়েছেন ২৩০টি ভোট। আর জব্বর পেয়েছেন ২০৯টি ভোট। এই আসনে আটশোর বেশি ভোট পড়েছিল। জানা গিয়েছে, তিনশোর বেশি ভোট বাতিল হয়েছে, অর্থাৎ প্রায় ৪০ শতাংশ! জেলা কংগ্রেস সভাপতি সমীর রায়ের নালিশ, ‘‘ওখানে গণনায় কারচুপি করা হয়েছে।’’
পঞ্চায়েত ভোটের ফল ঘোষণার পরেও প্রার্থীদের জয়ের বিষয়টি মামলার রায়ের উপরই নির্ভর করবে বলে বুধবার জানিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের এই নির্দেশ নির্বাচিত প্রার্থীদের জানাতে সব জেলাকে চিঠি দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এই আবহে সিল ছাড়াই জয়ের শংসাপত্র দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হতে জল্পনা শুরু হয়েছে। অবশ্য সব ক্ষেত্রে যে এমনটা হয়েছে, তা নয়। পঞ্চায়েত সমিতির জয়ী প্রার্থী, তৃণমূলের চিত্তরঞ্জন গড়াইয়ের শংসাপত্রে যেমন রিটার্নিং অফিসারের সিল রয়েছে। জেলা পরিষদের জয়ী প্রার্থী, তৃণমূলের মহম্মদ রফিকের শংসাপত্রেও রিটার্নিং অফিসারের সিল আছে।
নিয়ম হল, শংসাপত্রে সিল থাকবে। এবং সেটি থাকে শংসাপত্রের সামনের দিকেই। তবে তাঁর জয়ের শংসাপত্রে কমিশনের কারও সিল না থাকা নিয়ে হসিনুদ্দিন এতটুকু ভাবিত নন। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘ভোটে জিতেছি। বিডিও অফিসে গিয়ে জয়ের শংসাপত্র নিয়ে এসেছি। এক অফিসারের স্বাক্ষর রয়েছে। সিল রয়েছে কি না, দেখা হয়ে ওঠেনি।’’