প্রচারে তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ সেন।
একজন পুরভোটে সাতবার লড়ে অপরাজিত থেকেছেন। টানা ৩৫ বছর কাউন্সিলর থাকার পাশাপাশি পুরপ্রধান হিসেবে থেকেছেন এক টানা ১১ বছর। এ বার ফের অষ্টম ভোট যুদ্ধে মুখোমুখি তিনি।
অন্য জন ভোট যুদ্ধে নেমেছেন প্রথমবার। তাও কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে নয়। স্রেফ নির্দল প্রার্থী হয়ে। রাজনৈতিক আর বয়সের দিক থেকে এমন প্রবীণ আর নবীনের লড়াই ঘিরে জমজমাট ভোট যুদ্ধের আবহ তমলুক পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে।
২০ আসনের তমলুক পুরসভায় নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে দাঁড়িয়েছেন দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া রাজনীতিক রবীন্দ্রনাথ সেন। ১৯৮১ সাল থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াই শুরু করেছিলেন আইনের স্নাতক রবীন্দ্রনাথবাবু। তারপর থেকে টানা সাতবার পুরসভার ভোটে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। ২০০০ সালে পুরভোটের মুখে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিবারই ভোটে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে পেয়েছেন বামফ্রন্ট প্রার্থীদের। রাজ্যে দীর্ঘদিন বামফ্রন্ট সরকার চললেও পুরভোটে বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে অপরাজিতই থেকেছেন রবিবাবু। কিন্তু এ বার লড়াইটা একটু অন্য রকম। এ বার রবিবাবুর প্রতিপক্ষ বামফ্রন্ট নয়। নবাগত নির্দল প্রার্থী দীপু মাইতির বিরুদ্ধে লড়ছেন দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া রাজনীতিক রবিবাবু।
শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডটি ২০০২ সালের আগে ছিল উত্তর সোনামুই গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে। প্রথমে পুরসভার সংযুক্ত এলাকা হিসেবে ও পরবর্তী সময়ে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি পায় এই এলাকা । অর্থাৎ পুরসভা এলাকা হিসেবে এই এলাকার আত্মপ্রকাশও খুব বেশি দিনের নয়। কিন্তু পুরসভা গঠনের পর থেকে এই এলাকায় তৃণমূলের রাজনৈতিক আধিপত্য থাকে প্রতিটি নির্বাচনে। ২০০৫ সালে প্রথমবার পুরসভার নির্বাচনে জিতেছিলেন মহিলা তৃণমূল প্রার্থী। এরপর ২০০৮ সালে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদত্যাগ করায় ফের উপনির্বাচন হয় । তাতেও জিতেছিল তৃণমূল। আর ২০১০ সালে ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করা রবীন্দ্রনাথ সেন জেতেন প্রায় ৪০০ ভোটের ব্যবধানে।
প্রচারে পিছিয়ে নেই দীপু মাইতিও।
এ হেন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথবাবুর লড়াইটা শক্ত কেন?
বিরোধীদের সাথে তাঁর নিন্দুকদের অভিযোগ, পুরসভায় দীর্ঘদিন ধরে পুরপ্রধান-সহ কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করার পরেও নিজের জায়গায় নবীনদের জায়গা ছাড়তে রাজি নন তিনি । এমনকি গতবার নিজের ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত হওয়ার পরে পাশের ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছিলেন । তাই এ বার রবিবাবুর পুরভোটের লড়াইটা অনেকটা নিজের সঙ্গেই। দলের অন্দরে তো বটেই বিরোধীদের কাছে এবার অন্যতম ইস্যু রবিবাবুকে বহিরাগত প্রার্থী হিসেবে প্রচার করা।
তা সত্ত্বেও দমতে রাজি নন বছর সাতষট্টির রবিবাবু। দলের কর্মীদের নিয়ে ভোট প্রচারে বেরিয়েছিলেন তমলুকের ষোলফুকার লকগেট এলাকায়। রবিবাবুর কথায়, ‘‘এই এলাকায় সিপিএম বারবার প্রার্থী দিয়ে হেরেছে। কিন্তু এলাকায় উন্নয়নের যে কাজ করেছি তা মানুষ দেখেছেন। আশা করছি আরও বেশী ভোটে মানুষ আমাকে জেতাবেন।’’’
রবিবাবুর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নির্দল প্রার্থী দীপু মাইতি এ বার ভোটে প্রার্থী হয়েছেন প্রথমবার। বিয়াল্লিশ বছরের দীপু পেশায় ব্যবসায়ী। দীপুবাবুর দাবি তাঁর লড়াই কোন দলের বিরুদ্ধে নয়, ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ সেনের বিরুদ্ধে। কিন্তু এমন কেন? প্রচারের ফাঁকে দীপুবাবুর উত্তর, ‘‘একে তো উনি বহিরাগত প্রার্থী। এমনকি গতবার এই ওয়ার্ডে ভোটে দাঁড়ানোর পরে এলাকার মানুষের কাছে বলেছিলেন এ বার আমার শেষবার ভোটে দাঁড়ানো। সেই প্রতিশ্রুতি ভেঙে এবার ফের ভোটে প্রার্থী হয়েছেন। দ্বিতীয়ত উনি এলাকার মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দেন না। তাই এলাকার মানুষের দাবি মেনে ব্যক্তি রবিবাবুকে হারাতে আমি লড়াই করছি।’’ কিন্তু নির্দল প্রার্থী ভোটে কী কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এলাকার বাসিন্দাকে ? দীপুবাবু বলেন, ‘‘এলাকার মানুষের দাবি অনুযায়ী কাজ করব।’’ কিন্তু প্রথমবার ভোটের ময়দানে দাঁড়িয়ে এমন অভিজ্ঞ প্রার্থীর সঙ্গে লড়াইটা কঠিন লাগছে না ? দীপু বলেন, ‘‘কঠিন বটেই। তবে আমি মানুষের সাড়া পাচ্ছি।’’
রবিবাবু অবশ্য নির্দল প্রার্থীর সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রায় ২৬০০ ভোটার নিয়ে এই ওয়ার্ডে রবিবাবুর প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্দলের পাশাপাশি বিজেপি প্রার্থী তাপস সামন্ত, এসইউসি প্রার্থী সঞ্জীব কুইল্যা রয়েছেন। তাঁর সামনে নবীন প্রতিপক্ষ নিয়ে দুশ্চিন্তা যে থাকছেই। তাই রবিবাবু অষ্টমবার জিতে নিজের রেকর্ড ভাঙতে পারেন কি না সেটাই দেখার।
—নিজস্ব চিত্র।