দিঘার কনভেনশন সেন্টার ‘দিঘাশ্রী’। নিজস্ব চিত্র।
বয়স তিন পেরোতে চলল কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি দিঘায় আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টার-এর। যা সৈকত শহরের অন্যতম দর্শনীয়। সমুদ্র দেখতে এসে পর্যটকদের অনেকে ঘেরাটোপের বাইরে থেকে দেখে যান কয়েক কোটির এই নির্মাণকে।
রথ দেখা কলা বেচার মতো সৈকত শহরে সমুদ্র দেখার পাশাপাশি সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং, বাণিজ্যিক সম্মেলন এবং কনফারেন্সের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছায় রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন দফতর এই সুবিশাল কনভেনশন সেন্টার তৈরি করে। খরচ হয়েছিল ৭০ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। মুখ্যমন্ত্রী যার পোশাকি নাম রাখেন ‘দিঘাশ্রী’। সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও এখানে তাদের মিটিং, কনভেনশন করতে পারবে। অবশ্যই নির্দিষ্ট ভাড়ার বিনিময়ে। কলকাতা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে ছোট মফস্সল শহরে এমন আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টার তৈরি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। বিপুল পরিমাণ টাকায় তৈরি কনভেনশন সেন্টারের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ উঠবে কী ভাবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। যদিও উদ্বোধনের পরে বলা হয়েছিল কনভেনশন সেন্টার ভাড়া দিয়ে যে আয় হবে সেখান থেকে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ উঠবে।
কিন্তু ২০১৯ থেকে ২০২২-এর এখনও পর্যন্ত সর্বসাকুল্যে দশটিও মিটিং কিংবা কনফারেন্স এখানে হয়নি। অন্তত এমনটাই জানা যাচ্ছে প্রশাসনিক সূত্রে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সুবিশাল এই কনভেনশন সেন্টারের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক মহলের একাংশে। আর এই সব প্রশ্ন জিইয়ে রেখেই মাস তিনেক আগে কনভেনশন সেন্টার পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেএমডিএ (কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি)-কে হস্তান্তর করেছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ।
সাড়ে পাঁচ একর জায়গায় নির্মিত ওই কনভেনশন সেন্টারে কনফারেন্স হল, ব্যাঙ্কোয়েট, রেঁস্তোরা, মাল্টিজিম, সুইমিং পুল থেকে পাঁচতারা হোটেলের সুবিধা রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১৯ থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত কনভেনশন সেন্টার পরিচালনা করেছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। কোভিড পরিস্থিতির উন্নতির পর গত দেড় বছরে মেরেকেটে দুই থেকে তিনবার কনভেনশন সেন্টারে মিটিং হয়েছে। তার আগে মাত্র একবার কনভেনশন সেন্টার ভাড়া দেওয়া হয়েছিল বলে ডিএসডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে। দৈনিক এই কনভেনশন সেন্টারের ভাড়া প্রায় দু’লক্ষ টাকা বলে কেএমডিএ সূত্রের দাবি। কিন্তু কনভেনশন সেন্টারের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক বেশি বলেই মনে করেন প্রশাসনিক কর্তারা। পাশাপাশি রয়েছে নিরাপত্তা রক্ষীদের বেতন।
ডিএসডিএ-র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মানস কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘উদ্বোধনের পর থেকেই হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র মিটিং হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে আমরা কেএমডিএ-কে জানিয়েছিলাম। তারপর থেকে তারা কনভেনশন সেন্টার সম্পূর্ণরূপে পরিচালনা করছে।’’ কেএমডিএ-র দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সুপ্রিয় মাইতি বলেন, ‘‘মাস তিনেক হল আমরা এটা দেখাশোনা করছি। বুকিং সেই অর্থে কতগুলি হয়েছে বলা মুশকিল। তবে বাগানের পরিচর্যা ছাড়া এখনও পর্যন্ত কনভেনশন সেন্টার রক্ষণাবেক্ষণে কোনও খরচ হয়নি।’’
এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুদাম পণ্ডিত বলেন, ‘‘যেখানে ইচ্ছে সেখানে মুখ্যমন্ত্রী একটা করে বিশাল ভবন, পরিকাঠামো তৈরি করেছেন। কিন্তু কোথায় কোন প্রকল্প কতটা প্রাসঙ্গিক তাতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়নি। উন্নয়নের নামে সরকারি অর্থ নয়ছয়ের একটা জ্বলন্ত উদাহরণ দিঘার কনভেনশন সেন্টার।’’
তবে রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নে কনভেনশন সেন্টারকে আগামী দিনে পুরোদস্তুর কাজে লাগাতে চায় কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ। এর জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে কনভেনশন সেন্টার পরিচালনার জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করতে চায় তারা। কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানান, টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে। কনভেনশন সেন্টারের ভিতরে কিছু সংস্কারের পর তা দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে।