Purba Medinipur

চণ্ডীপুর-কাণ্ডে অভিযুক্ত যুবকের রহস্যমৃত্যু, খুনের অভিযোগ তুলছে গেরুয়া শিবির

মৃত যুবক ২০১৫ সালে চণ্ডীপুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চড় মারেন। তার পর তিনি ক্ষমাও চেয়ে নেন। তখন বিষয়টি মিটেও যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২১ ১৯:২৬
Share:

দেবাশিস আচার্য। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।

বছর ছয়েক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরে এক জনসভার মঞ্চে উঠে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চড় মারার ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হল তমলুকের সেই যুবক দেবাশিস আচার্যের। বিজেপি-র দাবি তাদের দলের কর্মী দেবাশিসকে পরিকল্পনামাফিক খুন করেছে তৃণমূল। যদিও তৃণমূলের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

Advertisement

তমলুক জেলা বিজেপির সভাপতি নবারুণ নায়েক জানিয়েছেন, বুধবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন দেবাশিস। বৃহস্পতিবার ভোরে সংজ্ঞাহীন দেবাশিসকে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন কিছু অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। তাঁর মাথা এবং গলায় ক্ষত ছিল। দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়। বস্তুত এর পরেই ঘটনার কথা জানতে পারেন বিজেপি নেতারা এবং দেবাশিসের পরিবার। হাসপাতালে ছুটে আসেন তমলুক থানার ওসি, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক-সহ একাধিক পুলিশ-কর্তা। ঠিক কী ঘটনা ঘটেছে, তা এখনও পুলিশ আঁচ করতে পারেনি। কে বা কারা দেবাশিষকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে গেল, তাঁর সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল, তা-ও পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। নবারুণ বলেন, ‘‘আমরা একে খুনের ঘটনা বলেই মনে করছি। রাজ্য সরকারের পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করবে না। তাই আমরা আদালতের পর্যবেক্ষণে তদন্ত চাইছি।’’

শুভেন্দু অধিকারী-ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা কনিষ্ক পণ্ডা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমাদের দলের কর্মী দেবাশিসকে রাজনৈতিক কারণে পরিকল্পনামাফিক খুন করা হয়েছে। আমরা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি।’’ যদিও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র তাপস মাইতি বলেন, ‘‘দেবাশিসের মৃত্যুর ঘটনা আদৌ খুন কি না, তা আমরা জানি না। এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’

Advertisement

দেবাশিসের বন্ধু শুভঙ্কর ঘোষ জানিয়েছেন, গতকাল রাত সাড়ে ৯ নাগাদ তিনি, দেবাশিস এবং সঞ্জয় দেবনাথ আর এক বন্ধু মোটর সাইকেলে তমলুক শহরের অদূরে মাতঙ্গিনী ব্লকের অন্তর্গত নেতাজিনগরে, ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের টোল প্লাজার কাছে একটি চা দোকানে চা খেতে গিয়েছিলেন। দেবাশিস হঠাৎ অন্য একজনের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে কিছুক্ষণ সময় চেয়ে নিয়ে চলে যান। কিন্তু তিনি ফেরেননি। শুভঙ্কর বলেন, ‘‘আমরা প্রায় ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর চা-দোকানিকে বলে বাড়ি চলে আসি। বাড়ি ফিরে দেবাশিসদাকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু মোবাইল বন্ধ ছিল।’’ সঞ্জয় বলেন, ‘‘মোবাইলে কারও ফোন আসার পরেই দেবাশিস আমাদের অপেক্ষা করতে বলে মোটরসাইকেল নিয়ে চলে গিয়েছিল।’’

২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি চণ্ডীপুরের সভায় তৎকালীন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেকের সঙ্গে মোবাইলে ছবি তোলার অছিলায় মঞ্চে উঠে তাঁকে সপাটে চড় কষিয়েছিলেন দেবাশিস। তৃণমূল কর্মীদের মারে আহত দেবাশিসকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। সে সময় দেবাশিসের বাবা-মা কালীঘাটে গিয়ে ছেলের কৃতকর্মের জন্য অভিষেকের কাছে ক্ষমা চান। দেবাশিসও সুস্থ হয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছিলেন। অভিষেকও তাঁকে ক্ষমা করেছিলেন। দেবাশিসের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ করা হয়নি তৃণমূলের তরফে।

তমলুক এলাকায় বিজেপি কর্মী হিসেবেই পরিচিত আচার্য পরিবার। দেবাশিসের মা শিবানী আচার্য বিজেপি মহিলা মোর্চার তমলুক নগর মণ্ডলের সহ-সভানেত্রী। ঘটনাচক্রে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি কাঁথির দইসাইয়ে অভিষেকের জনসভার আগে দেবাশিসকে পাশে বসিয়ে একটি ভিডিয়ো-য় (সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) ‘ভাইপো’-কে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন কণিষ্ক। জনসভায় অভিষেক ওই ভিডিয়ো-র প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন।

ঘটনা প্রসঙ্গে তমলুকের মহকুমা পুলিশ আধিকারীক অতীশ বিশ্বাস বলেন, "গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃতদেহ ময়না তদন্তে পাঠিয়েছি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ ভোরের দিকে ওই যুবককে আশংকাজনক অবস্থায় ভর্তি করে দিয়ে গিয়েছিলেন কয়েকজন। এরপর তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে তবেই কী ঘটেছিল তা জানানো সম্ভব হবে"

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement