অস্তিত্ব সঙ্কটে টেন্ট অ্যাকোমোডেশন।
হাত বাড়ালেই সমুদ্র। রাশি রাশি নীল জলের ঢেউ আর ঝাউয়ের জঙ্গলের মাঝে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটানোর হাতছানি। যার আকর্ষণ পর্যটকেরা এড়াতে পারবেন না ভেবে এবং তাঁদের বিনোদনের জন্য নিউ দিঘার কাছে উদয়পুরে গড়ে উঠেছিল ‘টেন্ট অ্যাকোমোডেশন’ অর্থাৎ তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা। মূলত হোটেল, লজের বদলে যাঁরা একটু অন্যরকম মেজাজে বেড়াতে চান তাঁদের জন্যই গড়ে তোলা হয়েছিল এই ব্যবস্থা।
লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেই ‘টেন্ট অ্যাকোমোডেশন’এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে। উদয়পুর যাওয়ার পথে পাকা রাস্তার ধারে দত্তপুর মৌজায় গড়ে ওঠা সুদৃশ্য তাঁবুগুলি এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। পর্যটকের দেখা নেই সেখানে। দেখা গেল রোদের হাত থেকে বাঁচতে তাঁবুর ভিতরে ঠাঁই নিয়েছে গরু-ছাগল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে পর্যটকদের জন্য বিনোদনমূলক তাঁবু তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় পর্যটন দফতর। দত্তপুর মৌজায় সাড়ে ৫ একর জমিতে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ ৩৬টি তাঁবু তৈরি করা হয়। এমনকী পর্যটকদের কাছে তাঁবুতে রাত কাটানোকে আকর্ষণীয় করতে এলাকায় বিভিন্ন রকমের আলো লাগানো হয়েছিল। সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে থাকা এক যুবক জানান, প্রথম দিকে মোটামুটি পর্যটকেরা আসতেন। তবে শীতকালে পর্যটকদের খুব একটা এখানে আসতে দেখা যেত না। ক্রমশ এখানকার আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়। ২০১৭ সাল থেকে এখানে পর্যটক আসা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের একটি অফিস চালু করে প্রশাসনিক কাজকর্ম চলে। পর্যটকের অভাবে বর্তমানে হতশ্রী চেহারায় ‘টেন্ট অ্যাকোমোডেশন’। দেখা গেল অনেক তাঁবুর উপরের ছাউনি ছিঁড়ে গিয়েছে। তাঁবুর ভিতরে গরু-ছাগল বসে রয়েছে। তবে পর্যটক না থাকলেও একা কুম্ভ হয়ে সেখানকার সবকিছু সামলাতে হচ্ছে নিরাপত্তাকর্মীকে। ওই নিরাপত্তাকর্মীর দাবি, এক সময় এখানে ১২ জন কর্মী কাজ করতেন।
কেন এমন অবস্থা তার খোঁজ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, দিঘায় তাঁদের জন্য যে এই ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে তা জানা নেই দিঘায় বেড়াতে আসা বহু পর্যটকেরই। হাওড়ার বাগনান থেকে বেড়াতে আসা জান মহম্মদ নামে এক পর্যটকের দাবি, ‘‘ওল্ড ও নিউ দিঘায় সরকারি এবং বেসরকারি ভাবে থাকার জায়গা অনেক। কিন্তু উদয়পুরে নিরিবিলি এবং নির্জন পরিবেশ হওয়ার সুবাদে অনেকেই রাত কাটাতে চান। তবে এই সব তাঁবুর কথা আমাদের জানা ছিল না। দিঘায় বা অন্যত্র এর জন্য কোনও রকম বিজ্ঞাপন নজরে পড়েনি।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদেরও একই অভিযোগ। এমনই একজন সত্যব্রত দাস বলেন, ‘‘এমন ফাঁকা জায়গায় তাঁবু করার আগে পর্যটকদের কাছে আরও প্রচারের দরকার ছিল। তা ছাড়া এখানে তাঁবুর পাশাপাশি যোগাযোগ এবং পর্যটকদের জন্য জিনিসপত্র কেনা কাটার মতো পরিকাঠামো গড়ে তোলা দরকার ছিল। কিন্তু সে সব কিছু না হওয়ায় পর্যটকরা মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। আসলে পরিকল্পনা ছাড়াই দিঘায় এ সব করা হয়েছিল।’’
যদিও স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি নিতাই চরণ সারের আশ্বাস, ‘‘অবিলম্বে ওই জায়গায় পর্যটকদের জন্য বিশেষ রকমের উদ্যান এবং সুইমিং পুল তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে।’’
তাঁবু তৈরি হওয়ার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই এ ভাবে সরকারি উদ্যোগ নষ্ট হওয়া নিয়ে ভুল পরিকল্পনার দিকে আঙুল তুলেছেন বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি (কাঁথি) অনুপ চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘বিশ্বব্যাঙ্কের পাঠানো কোটি কোটি টাকায় ভুল পরিকল্পনায় প্রকল্প রূপায়ণ করতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা নষ্ট করা হয়েছে। দিঘায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের মতো এলাকার মানুষও সেটা বুঝেছেন।’’
বন্ধ থাকা ওই সব তাঁবুতে আগামী দিনে নতুন প্রকল্প নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ ও দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি শিশির অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘পর্যটনের উপযোগী একগুচ্ছ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। পর্যটন দফতরের চূড়ান্ত সম্মতি পেলেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’’ জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘উদয়পুরের কাছে যে ‘টেন্ট অ্যাকোমেডেশন’ বন্ধ হয়ে গিয়েছে সে কথা আমরা পর্যটন দফতরকে জানিয়েছি। পরিবর্তে ওখানে কী করা যায় সে বিষয়ে পর্যটন দফতরের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।’’