স্কুলে পূজা। নিজস্ব চিত্র
বিয়ে আটকান, পড়তে চাই! নিজের বিয়ে বন্ধে চিঠি লিখে স্কুলের দ্বারস্থ হল একাদশ শ্রেণির এক কন্যাশ্রী।
চন্দ্রকোনা রোডের ডাবচা নবকলা হাইস্কুলের কলাবিভাগের ওই ছাত্রী পূজা দত্ত সোমবার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষকের কাছে চিঠি লিখে জানায়, ‘‘আমি একজন মেধাবী ছাত্রী। কিন্তু অভিভাবকেরা বয়স না হওয়া সত্ত্বেও আমার বিয়ে দিতে চাইছেন। তাই আমার নিবেদন বিয়ে যাতে বন্ধ হয় এবং আমি যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারি তার সুব্যবস্থা করা হোক।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, নবকলা গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক দত্ত মেয়ে পূজার বিয়ে ঠিক করেছিলেন কয়েক দিন পরে। গোড়া থেকেই বেঁকে বসে পূজা। বাড়ির লোকজনকে বারবার বোঝালেও তাঁরা রাজি না হওয়ায় অগত্যা নিজেই নিজের বিয়ে আটকাতে উদ্যোগী হয় সে। সোমবার সকালে চিঠি লিখে বান্ধবীকে নিয়ে সটান হাজির হয়ে যায় ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক লালমোহন হাজরার ঘরে। তাঁর হাতে চিঠি ধরিয়ে বলে, ‘‘আমি এখন পড়তে চাই, বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। আপনি একটু ব্যবস্থা করুন।’’ এর পরই ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক ও অন্য শিক্ষকেরা নাবালিকা পূজার বিয়ে বন্ধে উদ্যোগী হন।
স্কুল খবর পাঠায় গড়বেতা ৩-এর বিডিও অভিজিৎ চৌধুরীকে। বিডিও সাতবাঁকুড়া পঞ্চায়েতের দু’জন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎ বিষয়ীকে স্কুলে পাঠান। স্কুল চলাকালীনই পূজার বাবা ও পরিজনেদের স্কুলে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁদের বোঝানো হয়, প্রাপ্তবয়স্ক না হলে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। পূজার বাবা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিশ্রুতি দেন, ১৮ না হলে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। পরে কার্তিকবাবু বলেন, ‘‘পূজা আগেই বলেছিল বিয়ে করবে না, পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। আমরা ভাল পাত্র দেখে বিয়ে ঠিক করেছিলাম। এখন যখন মেয়েই রাজি নয় তা হলে আর বিয়ে দেব না।’’
পূজা বলে, ‘‘কেউ যখন আমার কথা শুনছিল না, তখন ভাবলাম স্যারকে চিঠি লিখে জানালে কেমন হয়! তাই সাহস করে স্যরকে লিখলাম। স্কুল এগিয়ে আসায় খুব ভাল লাগছে।’’ খুশি পূজার বান্ধবীরাও। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক লালমোহন হাজরা, শিক্ষক সন্দীপ মুখোপাধ্যায়, মেঘনাদ মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘পূজা কন্যাশ্রী প্রাপ্ত, পড়াশোনায় ভাল। নিজের বিয়ে আটকে ও স্কুলে দৃষ্টান্ত গড়ল।’’ বিডিও-রও মন্তব্য, ‘‘ওই ছাত্রীর সাহসের তারিফ করতে হয়।’’