—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
প্রস্তুতি পর্ব প্রায় মিটে গিয়েছিল। আগামী কাল, বৃহস্পতিবার জেলার অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসার কৃতীদের সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ছিল তমলুকের সুবর্ণ জয়ন্তী ভবনে। সেই মতো আমন্ত্রণ করা হয়েছিল মন্ত্রী, বিধায়কদের। তবে মঙ্গলবার সকালে জেলা পরিষদ জানিয়ে দিল, অনিবার্য কারণে বৃহস্পতিবার শিক্ষক দিবসের ওই প্রশাসনিক কর্মসূচি বাতিল করা হচ্ছে। ওই বাতিলের কারণ খুঁজতে লেগে পড়েছে শিক্ষক-সহ রাজনৈতিক মহল। প্রশ্ন উঠছে, আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে পড়ুয়া-শিক্ষকেরা প্রতিবাদে পথে নামায় অনুষ্ঠান বাতিল হল না তো?
রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৯ সালে প্রথম পূর্ব মেদিনীপুর পরিষদ এবং জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের যৌথ উদ্যোগে শিক্ষক দিবসে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রাথমিক ও হাই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, পড়ুয়াদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ বছর জেলা পরিষদের উদ্যোগেই আগামী ৫ সেপ্টম্বর তমলুক শহরের শালগেছিয়া হাই স্কুলের কাছে সুবর্ণ জয়ন্তী ভবনে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছিল। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ অপর্ণা ভট্টাচার্য-সহ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে এ নিয়ে তিনবার প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছে। জেলাপরিষদের তরফে অনুষ্ঠান নিয়ে একটি ‘হোয়াটসঅ্যাপ’ গ্রুপও খোলা হয়েছিল।
জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, এবার অনুষ্ঠানে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের অগস্টের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ৭০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, এ বছর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসায় রাজ্যের মেধা তালিকায় স্থান করে নেওয়া ১৩ জন কৃতী দের সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। খেলা এবং অন্য ক্ষেত্রেও কৃতী এবং প্রতিবন্ধী মিলিয়ে ১২ জন পড়ুয়া আমন্ত্রিত ছিল। অনুষ্ঠানে রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী, বিধায়ক, জেলাশাসক, জেলা পরিষদের পদাধিকারীরা আমন্ত্রিত ছিলেন। সর্বোপরি জেলার প্রাথমিক ও হাইস্কুল মিলিয়ে প্রায় ৫০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
প্রস্তুতি নিয়ে সোমবার দুপুরেও জেলাপরিষদের অফিসে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতৃত্বদের নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ অপর্ণা। এরপর মঙ্গলবার সকালে অপর্ণা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বার্তা দিয়ে জানান, ৫ সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠান বন্ধ থাকছে। পরবর্তীতে ওই অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে। অপর্ণার কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান বন্ধ করেছে। তাই আমরাও অনুষ্ঠান আপাতত স্থগিত করছি। জেলা পরিষদের সভাধিপতির নির্দেশ ক্রমে এই সিদ্ধান্ত। আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠান করার ভাবনা রয়েছে।’’
কিন্তু কেন হঠাৎ বাতিল অনুষ্ঠান?
এ বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা মেলেনি। তবে জেলার শিক্ষক মহলে জোর আলোচনা, এটি আর জি কর-কাণ্ডের রেশ। একাংশের মত, শিক্ষক-পড়ুয়াদের প্রতিবাদে নামার বিষয়টি রাজ্য সরকার ভাল চোখে দেখছে না। আবার বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সতীশ সাউ বলছেন, ‘‘চিকিৎসক ছাত্রী খুনের ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষিকারাও শোকস্তব্ধ। সেই কারণে হয়তো জেলা পরিষদ শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান বন্ধ রেখেছে।’’ অন্যদিকে, বিজেপি টিচার সেলের তরফে পার্থ চক্রবর্তীর মতে, ‘‘আর জি কর-কাণ্ডে রাজ্য সরকার শিক্ষক দিবস বাতিল করেছে। এ জেলায় আর তা থেকে বাদ
পড়বে কেন?’’