ভবন থাকলেও শিক্ষক নেই, ভরসা দূরের স্কুল

তার দু’পায়ের হাঁটুই ভাঁজ হয় না। ফলে, হাঁটতে বা বসতে খুবই কষ্ট হয় কল্যাণী মাহাতোর। সাইকেল চালানো তো অনেক দূরের কথা।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

ভবন পড়ে। চালু হয়নি নতুন স্কুল। —নিজস্ব চিত্র।

তার দু’পায়ের হাঁটুই ভাঁজ হয় না। ফলে, হাঁটতে বা বসতে খুবই কষ্ট হয় কল্যাণী মাহাতোর। সাইকেল চালানো তো অনেক দূরের কথা।

Advertisement

অথচ সাইকেল না চালালে তো পরের বছর থেকে স্কুলে যাওয়াই হবে না লবকুশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী কল্যাণীর। কারণ, ঝাড়গ্রাম ব্লকের লবকুশ গ্রামে তিন বছর ধরে চালু করা যায়নি উচ্চ প্রাথমিক স্কুল (পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি)। ভবন তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু শিক্ষক না থাকাতেই এই অবস্থা। বাধ্য হয়েই স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পাট চুকিয়ে পড়ুয়াদের যেতে হচ্ছে ৭ কিলোমিটার দূরের হাইস্কুলে।

লবকুশ গ্রাম আবার খোদ মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতোর এলাকায়! লবকুশ থেকে মাত্র ছ’শো মিটার দূরে আমলাচটি গ্রামে বাড়ি অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণিবাবুর। মন্ত্রীর এলাকায় পিচের রাস্তা হয়েছে, পানীয় জলের বন্দোবস্ত হয়েছে। কিন্তু উচ্চশিক্ষার দরজা সে ভাবে খোলেনি। শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্রী কল্যাণীর বাবা, পেশায় চাষি নরেন মাহাতো বলছিলেন, “আগামী বছর আমার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠবে। কিন্তু ও তো সাইকেল চালাতে পারে না। চাষবাসের কাজ ফেলে প্রতিদিন ৭ কিলোমিটার দূরের স্কুলে মেয়েকে যাতায়াত করানোও সম্ভব নয়। গ্রামে উচ্চ প্রাথমিক স্কুল চালু হচ্ছে না। খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছি।”

Advertisement

লবকুশ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লবকুশ, চণ্ডীপুর ও কামারবাঁধির মতো আশপাশের গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়ে। বর্তমানে এখানে পড়ুয়া রয়েছে ৭৩ জন। এই প্রাথমিক স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক রমণীমোহন মণ্ডল ২০১৩ সালে রাজ্য সরকারের ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মান পেয়েছিন। বছর পাঁচেক আগে এলাকাদের পড়ুয়াদের এই সমস্যা শিক্ষা দফতরের বিভিন্ন মহলের নজরে এনেছিলেন রমণীমোহনবাবু। তারপর ২০১৩-তেই রাজ্যের শিক্ষা দফতর গ্রামে উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের ভবন তৈরির অনুমোদন দেয়। ৪ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা বরাদ্দ করে সর্বশিক্ষা মিশন। প্রাথমিক স্কুলের কাছে নতুন স্কুলবাড়ি গড়ে তুলতে গ্রামের কয়েকজন জমি দান করেন।

প্রাথমিক স্কুলের কমিটিকেই ভবন তৈরির দায়িত্ব দেয় প্রশাসন। রমণীমোহনবাবুর তত্ত্বাবধানে ২০১৪ সালে উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের ভবন তৈরি হয়। তারপর তিন বছর কেটে গেলেও শিক্ষকের অভাবে স্কুলটি চালু করা যায়নি। অভিভাবক তরণীকান্ত মাহাতো, ব্রজবিলাস মাহাতোদের কথায়, “আমাদের এলাকায় বাস-ট্রেকার চলে না। সাইকেলে ছেলেমেয়েদের দূরের স্কুলে যাতায়াত করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। ” রমণীমোহনবাবুও বলছিলেন, “বহুবার শিক্ষা দফতরে আবেদন করে সমস্যা মেটেনি। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দিয়ে স্কুলটি চালানোর ব্যবস্থাও করা হয়নি।”

যাঁর এলাকায় স্কুলের এই হাল, সেই মন্ত্রী চূড়ামণিবাবুর গলায় অবশ্য আশ্বাসের সুর। তিনি বলেন, ‘‘এখন তো সব স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ শুরু হচ্ছে। শীঘ্রই এখানেও শিক্ষক চলে আসবেন। আমি নিজেও বিষয়টি দেখব।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যাম পাত্রেরও বক্তব্য, “লবকুশ উচ্চ প্রাথমিক স্কুলটি অবিলম্বে চালু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement