Tamluk

হাসপাতালে ভবঘুরেদের আস্তানা, প্রশাসনের ভূমিকায় সরব কর্তৃপক্ষ

হাসপাতাল সূত্রের খবর, রাস্তাঘাটে কোনও ভবঘুরে অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ বা কোনও স্বেছাসেবী সংগঠন তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়।

Advertisement

দিগন্ত মান্না

তমলুক শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৪৬
Share:

হাসপাতাল চত্বরে ভবঘুরেরা। —নিজস্ব চিত্র।

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কার্যত ওঁদের ঘর। কেউ সেখানে রয়েছেন ১০ বছর ধরে। তো কেউ আশ্রয় নিয়েছেন ১০ মাস আগে। আপাতত এই পাঁচজন ভবঘুরেকে নিয়ে সমস্যায় তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। কারণ, এখনও এরা ওয়ার্ডে ঢুকে রোগীদের বিরক্ত করছেন, চিমটি কাটাছেন বা কখনও কামড়ে দিচ্ছেন। আর এ সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে ভবঘুরে এক মহিলার দু'বার অন্তঃসত্ত্বা হওয়া এবং তাঁর সন্তানের হদিস না মেলার ঘটনা। বারবার পুলিশকে জানিয়েও কোনও সুরাহা না হওয়ায় এখন সরব জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রের খবর, রাস্তাঘাটে কোনও ভবঘুরে অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ বা কোনও স্বেছাসেবী সংগঠন তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। গত ১০ বছরে এভাবে তমলুক জেলা হাসপাতালে এরকম বহু ভবঘুরেকে ভর্তি করা হয়েছে।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, হাসপাতালের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরও পাঁচজন ভবঘুরে এখনও এই চত্বরেই রয়েছে গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন টানা ১০ বছর হাসপাতালে রয়েছেন। অথচ তাঁর বাড়ি তমলুক শহরেই।কিন্তু ভবঘুরকে ঘরে ফেরাতে উদ্যোগী হয় পুলিশ বা প্রশাসন। তাঁর বাড়ির লোকেরাও তাঁকে নিয়ে যেতে চায়নি বলে অভিযোগ।

বাকিদের ঠিকানা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য জানা নেই। কখনও ওয়ার্ডে রোগীদের পাশে, কখনও সিঁড়ির পাশে, কখনও আবার হাসপাতালের বারান্দায় এঁদের দেখা মেলে। গোটা হাসপাতাল জুড়ে দিনরাত এঁদের বিচরণ। মাঝেমধ্যে রোগী এবং রোগীর আত্মীয়দের বিরক্ত করা, কামড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এঁদের বিরুদ্ধে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ভবঘুরেদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তমলুক থানায় একাধিকবার আবেদন জানানো হয়েছে।কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে রোগীদের পাশাপাশি, এঁদেরও দিনে তিনবার খাবার দেন হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ। অসুখ-বিসুখ হলে করা হয় চিকিৎসা।

Advertisement

সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে এসেছে। তমলুক হাসপাতালে ঠাঁই নেওয়া এক ভবঘুরে মহিলা দু'বার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু সেই সন্তান দু'টির কোনও হদিস মেলেনি। তা থেকে জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমান, হাসপাতালে সন্তানকে বিক্রির চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাম্রলিপ্ত গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজের মেডিক্যাল সুপার ভাস্কর বৈষ্ণব বলেন, ‘‘হাসপাতালে দু'জন ভবঘুরে মহিলা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন দু'বার অন্তঃসত্ত্বা হন। দু'বারই সন্তান জন্ম দেওয়ার কয়েকদিন আগে ওই মহিলাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর কেউ বা কারা ওই মহিলাকে আবার হাসপাতালে রেখে চলে যায়। আমাদের ধারণা এখানে অসাধু চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারাই পুরো কর্মকাণ্ডে জড়িত।’’

সুপারের কথায়, ‘‘হাসপাতালের মধ্যে মোট পাঁচ জন ভবঘুরে রয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন সময় রোগীদের বিরক্ত করছেন। ওঁদের স্থানাতরিত করার জন্য আমরা পুলিশকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। আমরা চাই প্রশাসন অথবা কোনও স্বেছাসেবী সংগঠন ওই ভবঘুরেদের এখান থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুক।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, ভবঘুরে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ অনেক সময় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে।তাঁদের বাড়ির ঠিকানা পাওয়া গেলে সুস্থ হওয়ার পর বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকানা না পাওয়া গেলে জেলা প্রশাসন তাদের হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।এক্ষেত্রে পুলিশ কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। পুনর্বাসনের জন্য জেলা প্রশাসন পুলিশের সাহায্য চাইলে পুলিশ তা পালন করে থাকে। আর জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলছেন, ‘‘ওই ভবঘুরেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement