রাজ্য পুলিশ যে শাসকদলের ‘দলদাসে’ পরিণত হয়েছে, এই অভিযোগ হামেশাই করতে শোনা গিয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে। এবার পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে সরাসরি ‘হুমকি’ই দিয়ে ফেললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। তমলুকের সোনাপেত্যা টোলপ্লাজা থেকে রাধামণি বাজার পর্যন্ত মিছিল করে একটি পথসভায় শুভেন্দু জেলা পুলিশ সুপার অমরনাথ কে-কে কার্যত হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘কিছু করতে পারবেন না আমার। বিজেপির আণ্ডারেই চাকরি করতে হবে।’’
বিজেপির ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়কে সোনাপেত্যা টোলপ্লাজার কাছে বিজেপি কর্মীদের পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে বিজেপি কর্মীর রাস্তা অবরোধ এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, বিজেপি কর্মীরা রঘুনাথপুর-২ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান তারক জানাকেও মারধর করেন ওই দিন। ঘটনায় ১০ জন বিজেপি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে তমলুক থানার পুলিশ। তারা আপাতত জেল হেফাজতে রয়েছেন। ওই বিজেপি কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এ দিন সোনাপেত্যা টোলপ্লাজা থেকে রাধামণি বাজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার মিছিল করেন শুভেন্দু। মিছিল শেষে পথসভায় শুভেন্দু বলেন, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে মানুষ নেই। সংখ্যালঘুরাও অনেকেই সরে গেছেন। শুধুমাত্র রয়েছে পুলিশ। আর সে তো লড়াই আমার বিরুদ্ধে। আপনি দেখবেন, মোড়ে মোড়ে স্পিডোমিটার লাগিয়েছে এই অমরনাথ। ভাইপোর পা চাটে।’’ এর পরেই শুভেন্দুর কটাক্ষ, ‘‘আরে যত ভাই করুন না কেন, স্পিডোমিটার আমি জানি। কিছু করতে পারবেন না আমার। ২০ মাস ধরে চেষ্টা করেছেন। আরও ২০ মাস চেষ্টা করুন। বিজেপির আণ্ডারেই চাকরি করতে হবে। শুধু দিনের অপেক্ষা।’’
উল্লেখ্য, কাঁথির কাছে শুভেন্দুর কনভয় সম্প্রতি একাধিকবার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এর পরে ওই সব রাস্তায় গাড়ির গতি মাপতে যন্ত্র ব্যবহার করছে পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে এসে রাস্তায় দুর্ঘটনা কমানোর বিষয়ে মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে। এ দিনের সভায় ধৃত দলীয় নেতা-কর্মীদের ‘জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী’র অ্যাখা দিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘ওই ১০ জন জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীকে জামিনে মুক্ত করে পুলিশ সুপারের অফিসে বা তমলুক থানার সামনে সংবর্ধনা দেব। দ্বায়িত্ব আমার। কালকেই বিজেপির দল ১০ জনের প্রত্যেকের বাড়িতে যাবে। আর যুব মোর্চার দল জেলে যাবে। প্রয়োজন হলে আমি জেলে যাব।’’
পুলিশ সুপারকে হুমকি দেওয়া নতুন কিছু নয় শুভেন্দুর কাছে। কয়েক মাস আগেও পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে। এ দিন তাঁর ওই নয়া ‘হুমকি’ প্রসঙ্গে তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘এটা বিজেপির ধারা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলিতে যেমন ব্যবহার করছে, তেমন এখন পুলিশের স্বাধিকার ভঙ্গেরও চেষ্টা করছে। তবে বাংলায় আগামী ২৫ বছরে বিজেপি আসতে পারবে না।’’