শুভেন্দু অধিকারী ও প্রশান্ত কিশোর। ফাইল চিত্র।
দলেরই কর্মসূচি রূপায়ণে সহযোগিতা চেয়ে জেলার এক তৃণমূল কর্মীকে ফোন করেছিলেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার কর্মী। ওই তৃণমূল কর্মী শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী বলে পরিচিত। পিকে-র সংস্থার কর্মীকে শুনতে হল, ‘‘আমার কী হবে? (সহযোগিতা করলে)। এই যে দু’দিন ছুটে কাজ করব, এর জন্য কি কোনও টাকা পাব? প্রশান্ত কিশোর তো বলেছেন, রাজনীতিকে যদি কর্মক্ষেত্র বানাতে চান তাহলে যোগ দিন। আমি তাহলে কর্মক্ষেত্র বানাতে চাই!’’
তৃণমূলের সঙ্গে শুভেন্দুর ‘দূরত্ব’ এই মুহূর্তে কারও অজানা নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম সফরেও মমতার পাশে শুভেন্দু ছিলেন না। সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসে জঙ্গলমহলের দায়িত্বে শুভেন্দুকে ফেরাননি দলনেত্রী। তারপর থেকে শুভেন্দুর দলহীন জনসংযোগ চলেছে। তাঁর অনুগামীরাও ‘দাদা’র ছবি গলায় ঝুলিয়ে নানা কর্মসূচিও করছেন।
তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, দলের হয়ে পিকে-র কাজকর্ম ‘ভাল চোখে’ দেখেন না শুভেন্দু অনুগামীরা। এক সময়ে পূর্ব মেদিনীপুরে কাজে গিয়ে টিম পিকে-কে ‘বেগ’ পেতে হয়েছে। এই আবহে পশ্চিম মেদিনীপুরের ওই ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে। পিকে-র সংস্থার এক কর্মীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মনে হচ্ছে, শুভেন্দু অনুগামীদের থেকে এখন আর তেমন সহযোগিতা পাব না।’’
ক’দিন আগে চন্দ্রকোনায় তৃণমূলের ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠীর হাতে হেনস্থা হন পিকে-র সংস্থার এক কর্মী। কেন এমন পরিস্থিতি? তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির জবাব, ‘‘চন্দ্রকোনায় একটা ছোট সমস্যা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তার সমাধান হয়ে গিয়েছে। আর কিছু আমার জানা নেই।’’
দলের এক সূত্রে অবশ্য খবর, শুক্রবার দুপুরে ‘তফসিলি সংলাপ’ কর্মসূচির সূত্রেই ওই ফোন করা হয়। কথোপকথনের অডিয়ো (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে। সেখানে পিকে-র সংস্থার কর্মী ওই তৃণমূল কর্মীকে শুরুতে বলছেন, ‘আইপ্যাক থেকে ফোন করছিলাম। শুনেছেন তো একটা এসসি ক্যাম্পেন চলছে তফসিলি সংলাপ বলে?’ তৃণমূল কর্মীর জবাব, ‘আমি তো এসসি নই। কী করে শুনব!’ পিকে- র সংস্থার কর্মী জানাচ্ছেন, ‘এটা তো ৫ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে। সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়েই হচ্ছে। আপনার এলাকার দশটি গ্রামের এমন এসসি মানুষের নাম-নম্বর লাগবে, যাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। আপনি দিতে পারবেন?’ তখনই ওই তৃণমূল কর্মী চাওয়া-পাওয়ার কথা বলেন। পিকে- র সংস্থার কর্মী বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘কী পাবেন সেটা দল জানে।’ তখন তৃণমূল কর্মীর বক্তব্য, ‘দল-ই যদি জানে তাহলে দলকে ফোন করতে বলুন! আইপ্যাক কেন ফোন করবে?’
তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, ওই কর্মী ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি করেছেন। তাঁর নাম-নম্বর পিকে-র সংস্থার কাছে রয়েছে। তবে ওই কর্মী শুভেন্দু অনুগামী বলে তাদের জানা ছিল না।
বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এমন ঘটনা তৃণমূলের জন্য অশনি-সঙ্কেত, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।