ফাইল চিত্র।
উপনির্বাচনের আগেও শুরু হয়ে গেল রেল-রাজনীতি।
মঙ্গলবার রেলশহরে এসে খড়্গপুর (সদর) বিধানসভা উপনির্বাচনের উত্তাপ বাড়িয়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। শুরু করলেন রেল রাজনীতিও। এ দিন খড়্গপুর শহরের বোগদায় পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ডিআরএম অফিসের সামনে জমায়েত করেছিল তৃণমূল। সেই কর্মসূচির মুখ্য বক্তা ছিলেন পরিবহণমন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু। সেই কর্মসূচিতেই সম্প্রতি শহরের জলমগ্ন দশার জন্য রেলকেই দায়ি করলেন তিনি। এ ছাড়া তুলে ধরেছেন উন্নয়নের ক্ষেত্রে রেল-পুরসভা দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ। বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষকে একহাত নেন তিনি।
২০১৬ সালে খড়্গপুর থেকে বিধানসভায় জেতেন দিলীপ। এ বার লোকসভা নির্বাচনেও মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে লড়েন তিনি। মানস ভুঁইয়াকে হারিয়ে সাংসদ হন দিলীপ। তাই শহরে এ বার বিধানসভা উপ-নির্বাচন। এ দিনের কর্মসূচিতে শুভেন্দু বলেন, “আমরা ২০২১সালে ভোট চেয়েছিলাম। কিন্তু যে উপ-নির্বাচন হবে তা বিজেপি চাপিয়ে দিয়েছে। আরও একবার ভোট দিতে হবে। ওই ভোটটা জাত-পাত, ধর্মের ভিত্তিতে দেবেন না। কাজের ভিত্তিতে দেবেন। আপনাদের বিধায়ক যদি কাজ করে থাকে তবে আরও একবার পদ্ম ফোটান। আর কাজ না করলে জোড়াফুলে বোতাম টিপুন।”
এ দিন জমায়েতের সভামঞ্চে বক্তৃতার গোড়া থেকেই বিজেপি ও রেলের বিরুদ্ধে সমালোচনার সুর শোনা গিয়েছে শুভেন্দুর গলায়। আগামী উপ-নির্বাচনে যে তাই রেলের অনুন্নয়নকে হাতিয়ার করেই তৃণমূল পথে নামতে চলেছে তা টের পাওয়া গিয়েছে। শুভেন্দু বলেন, “শহরে বেশি ভাষণ হয়েছে। কাজ কিছু হয়নি। তাই ভাষণ বেশি দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। যে রুটি, কাপড়, ঘরের অধিকার দাবি রয়েছে তা আপনাদের ছিনিয়ে নিতে হবে।” গত দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়েছিল খড়্গপুর শহর। সেই ঘটনার পিছনেও এ দিন রেলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, “গত দু’দিন রেলের কল্যাণে খড়্গপুর শহর রেলের কল্যাণে জলবন্দি হয়ে গিয়েছে। লোকসভা ভোটে আপনারা বিজেপিকে জিতিয়েছেন। আর রেল উপহার দিয়ে দিয়েছে। এক রাতের বৃষ্টিতে ঘর থেকে কেউ বেরতে পারেনি।” রেলের এলাকার উন্নয়নে রাজ্য সরকার ও পুরসভা সচেষ্ট বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নের জন্য টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু রেল অনুমতি দিচ্ছে না। পুরপ্রধান উন্নয়নের কাজ করতে চাইলে রেল আরপিএফ পাঠিয়ে দেয়।” বিজেপির নির্দেশে আরপিএফ অত্যাচার করছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
শুভেন্দুর অভিযোগের জবাব এসেছে গেরুয়া শিবির থেকে। বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাস বলেন, ‘‘এত দিন তো খড়্গপুরে মাফিয়া-পুলিশকে দিয়ে ভোট করেছে তৃণমূল। মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। তাই এখন যদি তৃণমূল মানুষকে কাজের বিচার করে ভোট দিতে বলেন তবে বলব শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। তবে খড়্গপুরের মানুষ বিজেপি ও দিলীপ ঘোষের সঙ্গে রয়েছে। তাই আগে শুভেন্দু অধিকারী পূর্ব মেদিনীপুর সামলান তারপর পশ্চিম মেদিনীপুরে আসবেন।”
রেল রাজনীতি শুরু করলেও কৌশলে দূরত্বও তৈরি করেছেন শুভেন্দু। এ দিন নানা সমস্যা নিয়ে ডিআরএমের সঙ্গে আলোচনা করতে যাওয়ার আগে মঞ্চে শুভেন্দু বলেন, “আমার দু’টি সত্ত্বা রয়েছে। আমি একজন তৃণমূলকর্মী হিসাবে ডিআরএমের সঙ্গে প্রতিনিধিদের নিয়ে দেখা করব। আমি মন্ত্রী হিসাবে ডিআরএমকে ডেকে পাঠাতে পারি। নিয়ম হচ্ছে আমি ডাকলে ডিআরএমকে আমার কাছে আসতে হবে। কিন্তু তৃণমূলকর্মী হিসাবে আমি জানতে চাই খড়্গপুরের মানুষ আর কতদিন বঞ্চনার শিকার হবে?”
আগামী দিনে এই আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে ডিআরএমকে ডেকে জেলাশাসকের উপস্থিতিতে রেল এলাকায় কাজ করতে দেওয়ার কথা বলা হবে বলে জানান তিনি। তার পরে গার্ডেনরিচে রেলের জেনারেল ম্যানেজারের অফিস ঘেরাও এবং দিল্লির যন্তরমন্তরে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “এই আন্দোলনকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। আমি ছেড়ে দেওয়ার মানুষ নই।”