মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। — ফাইল চিত্র।
রাজ্যে উত্তর কোরিয়ার মতো শাসন চলছে বলে এ বার মন্তব্য শুভেন্দু অধিকারীর। বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে ‘সৌজন্য’ সাক্ষাতের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও এক বার মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। রবিবার নন্দীগ্রামে এক দলীয় কর্মসূচিতে গিয়ে শুভেন্দুর অভিযোগ, একের পর এক অসত্য মামলায় তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মামলার তালিকা পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করবেন বলেও জানিয়েছেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর অভিযোগ নিয়ে পাল্টা তোপ দেগেছে তৃণমূলও। রাজ্যের মন্ত্রী এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় শুভেন্দুর ‘প্রধান প্রতিপক্ষ’ অখিল গিরির মতে, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা করে যাওয়াই রাজ্যের বিরোধী দলনেতার কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র নন্দীগ্রামের আমদাবাদ এলাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’-এর সরাসরি সম্প্রচার শোনার কর্মসূচিতে রবিবার যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। বিধানসভা ভোটের পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে ভূরি ভূরি বানানো মামলা করা হচ্ছে বলে সেখানেই তিনি অভিযোগ করেন। সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে সেগুলি পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করব মঙ্গলবার।’’
আগামী ৫ ডিসেম্বর দিল্লি সফরে যাবেন মমতা। শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, ‘‘শুনছি ৫ তারিখে নাকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যাবেন। উনি পৌঁছনোর আগে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সকলের জানা দরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নর্থ কোরিয়ার শাসকের মতো এখানে কী ভাবে শাসন চালাচ্ছেন।’’ তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মামলার তালিকা দিয়ে পুস্তিকা প্রকাশিত হবে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি-সহ একাধিক ভাষায়। দ্রৌপদী, মোদী, ধনখড়, অমিতদের পাশাপাশি সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও তিনি ওই পুস্তিকা পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু। ৫ ডিসেম্বর বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকেও। নবান্ন সূত্রে খবর, এই বৈঠকের পর আলাদা করে মমতা-মোদী মুখোমুখি আলোচনাও হতে পারে।
গত শুক্রবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও তিন বিজেপি বিধায়ক। মমতাকে প্রণামও করেন শুভেন্দু। সেই সাক্ষাৎকে দু’পক্ষই ‘সৌজন্য’ বলে ব্যাখ্যা দিয়েছিল। তার রেশ কাটতে অবশ্য দেরি হয়নি। শনিবার ঠাকুরনগরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে একটি জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছিলেন শুভেন্দু। সেই সুর বজায় রইল রবিবারও।
শুভেন্দুর অভিযোগের কথা শুনেই মুখ খুলেছেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওঁর বিরুদ্ধে যা মামলা হয়েছে পুলিশ তার তদন্ত করছে। উনি কিন্তু মামলার জন্য জেলে যাননি। মামলা মিথ্যে না সত্যি তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। উনি গা জোয়ারি করে যতই বলুন মিথ্যে মামলা হয়েছে, তা ঠিক নয়।’’ তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার কথাও তুলে ধরেছেন অখিল। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ভোটের পরে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দিয়ে অনেককে জেলে পাঠানো হয়েছে। নন্দীগ্রামে একঝাঁক নেতা কর্মী হলদিয়ার জেলে বন্দি। খেজুরিতে মিথ্যে মামলা দিয়ে একাধিক মানুষকে জেলে পাঠিয়েছে। আর সব ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় এজেন্সি সিবিআই, এনআইএকে কাজে লাগানো হয়েছে। এমন মামলা করা হয়েছে যে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও জামিন পাচ্ছেন না আমাদের লোকজন।’’ অখিলের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা করাই শুভেন্দুর অভ্যাস।