জলবন্দি: দাসপুরের পলাশপাই উচ্চ বিদ্যালয়। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
বাড়িতে থাকলেও দিন পনেরো হতে চলল বই নিয়ে বসার সুযোগ হয়নি অমিত, ইসমাইলদের।
পড়বে কী করে! ঘর থেকেই জল নামনি এখনও। খাটের উপরই সংসার। সেখানেই রান্নাবান্না, খাওয়া দাওয়া থেকে শোওয়া সব একই সঙ্গে। এর মধ্যে বই নিয়ে দু’দণ্ড বসার মতো ফুরসত কোথায়! দাসপুরের চাঁইপাটের বাসিন্দা নবম শ্রেণির পড়ুয়া অমিত পালের কথায়, ‘‘ দেখছেন তো অবস্থা। সব ওলটপালট হয়ে যাওয়ায় বইপত্রও কোথায় জানি না। খোঁজার উপায়ও নেই।’’ পাল্টা প্রশ্ন ছোড়ে সে, ‘‘এ ভাবে পড়াশোনা করা যায়?”
গোপীগঞ্জের বাসিন্দা একাদশ শ্রেণির শেখ ইসমাইল বলে, “সকাল হলেই পানীয় জলের খোঁজে টিনের চালে উঠে বসে থাকি। বাবারও শরীর খারাপ। এমন পরিবেশে কী পড়ায় মন বসে।” বন্যার ঘাটালে অমিত, ইসমাইলদের মতোই অবস্থা হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর। গত ২৩ জুলাই থেকে ঘাটালে জল ঢুকতে শুরু করেছিল। দু’সপ্তাহ পার হতে চলল। এখনও স্কুলগুলিতে পড়শোনার পরিবেশ তৈরি হয়নি। কোথাও সবে মাত্র জল সরেছে তো কোনও স্কুলে এখনও কোমর বা হাঁটু সমান জল। বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল জলের তলায়। তার উপর সাপের উপদ্রব। জল সরে যাওয়া স্কুলগুলিতে এখনও নোংরা পরিষ্কার না করার দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে।
শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, ঘাটাল মহকুমায় স্কুলের সংখ্যা ১৯৬টি। এর মধ্যে ৭৬টি স্কুলে জল ঢুকেছিল। মহকুমায় পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ। তার মধ্যে অন্তত ষাট হাজার পড়ুয়া জলমগ্ন। দিন পনেরো ধরে এত সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা পুরোপুরি লাটে। স্কুল থেকে বাড়ি সবই জলের দখলে। বাড়িতে বিদ্যুতের সমস্যা। পানীয় জলেরও অভাব। বন্ধ টিউশনও। ছাত্রছাত্রীদের জলবন্দি হয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে। জেলার অন্যান্য স্কুলে এখন পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির পড়ুয়াদের ইউনিট টেস্ট হচ্ছে। অগস্টের শুরুতেই এখানকার স্কুলগুলিতেও ওই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। বন্যার জেরে পরীক্ষার সঙ্গে বন্ধ পঠন-পাঠনও। তা ছাড়া পুজোর ছুটির পরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের টেস্ট পরীক্ষা। এই সময় স্কুল বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা। দশম শ্রেণির ছাত্রী শম্পা শাসমলের কথায়, “স্কুলে ত্রাণ শিবির চলছে। কবে ক্লাস শুরু হবে জানি না। সামনেই টেস্ট পরীক্ষা। এখনও সিলেবাসই শেষ হয়নি।” স্থানীয় খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন হাইস্কুল এবং গোপালপুর চিত্তরঞ্জন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পঙ্কজ ভুঁইয়া ও বিমলেন্দু পাল বলেন, “স্কুলে এখনও জল। ছাত্রছাত্রীরাও জলবন্দি। কবে স্কুল চালু হবে কে জানে।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, বন্যার জল ঢুকে স্কুলগুলিতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘাটালের পশ্চিম অংশে চন্দ্রকোনা ১ ও ২ ব্লক এবং বেশ কিছু এলাকার স্কুল আজ, মঙ্গলবার থেকে চালু হওয়ার কথা। কিন্তু দাসপুর ও ঘাটাল ব্লকের মনোহরপুর-১ ও ২ পঞ্চায়েতের স্কুলগুলিতে চলতি মাসেও পঠন-পাঠন আদৌ শুরু করা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে শিক্ষা দফতর।
জেলা স্কুল পরিদর্শক অমর শীল বলেন, “বন্যার জন্য ঘাটাল মহকুমার ছাত্রছাত্রীরা সমস্যায়। এখনও বহু স্কুলে জল রয়েছে। জল কমলে ওই সব স্কুলকর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করব। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুজোর ছুটির সময় ক্লাস চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।” স্থানীয় বরুণা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের আহ্বায়ক সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চেষ্টা হচ্ছে দুর্গত এলাকার ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে বাড়তি ক্লাস নিয়ে ক্ষতি পূরণ করার। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা শুরু করেছি।”