বাঘ শিকারি কালীপদ সিংহর স্মৃতিমঞ্চের সামনে তাঁর পরিজনেরা। গড়বেতার জেমোয়াশোল গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
তখন বাঘ বেরোলেই ডাক পড়ত তাঁর। বন্দুকের অব্যর্থ নিশানায় বাঘকে বাগে আনতে তাঁর জুড়ি মেলা ছিল ভার। জমিদার কোম্পানির সাহেব তাঁকে উপহার দিয়েছিলেন একনলা বন্দুক। তিনি কালীপদ সিংহ, ব্রিটিশ আমলের দক্ষ বাঘ শিকারি।
বাঘিনি জ়িনত ধরা পড়েছে। তবে তার আগমন উস্কে দিয়েছে কালীপদের স্মৃতি। পরিজনেদের কেউ বলছেন, ‘জেঠামশাই থাকলে বন দফতরকে এত মেহনত করতে হত না’। কারও মুখে দাদুর বাঘ শিকারের অসম সাহসের কথা।গড়বেতার জেমোয়াশোল গ্রামের সিংহপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন কালীপদ সিংহ। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে দক্ষ বাঘ শিকারি হিসাবে তিনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন। গ্রামের বাড়িতে তাঁর ভাইপো, নাতবৌরা সেই স্মৃতি আওড়াচ্ছেন এখন। কালীপদর ভাইপো বীরেন্দ্রনাথ সিংহ এখন ৬৩। তিনি বলেন, ‘‘জেঠামশাইয়ের বন্দুকের নিশানা ছিল নিঁখুত। একসময় গড়বেতা, গোয়ালতোড়-সহ রাঢ়বঙ্গের গভীর সব জঙ্গলে বাঘ, নেকড়ের মতো হিংস্র বন্যপ্রাণী ঘোরাঘুরি করত। তিনি একটি গাদা বন্দুক নিয়ে শিকারে যেতেন। শুনেছি, ৫-৬টির বেশি বাঘ শিকার করেছিলেন। অনেক উপহারও পেয়েছিলেন।’’ কালীপদর নাতৌ সারথী সিংহ, সম্পর্কে তাঁর বৌমা ৭৬ বছরের কৃষ্ণা সিংহরা জুড়লেন, ‘‘খুব সাহসী ছিলেন। লম্বাচওড়া চেহারা। এখন উনি থাকলে অনায়াসেই জ়িনতকেও জব্দ করে দিতেন।’’
তবে কালীপদর কোনও ছবি বা তাঁর ব্যবহৃত শিকারের কোনও জিনিসপত্র পরিজনেদের কাছে। আছে শুধু তাঁর স্মৃতিমঞ্চ। কালীপদ সিংহের মৃত্যু হয় ১৯৭৮ সালে। তখন তাঁর বয়স প্রায় ৭৫। এলাকার প্রবীণরা আজও তাঁকে শিকারি কালী সিংহ নামেই চেনে। তাঁর বাবা অখিলচন্দ্র সিংহও ছিলেন শিকারি। শোনা যায় শিকারে গিয়ে তিনিও একবার বাঘের মুখে পড়েছিলেন। বাবার থেকেই শিকারের আদবকায়দা শিখেছিলেন ক্ষত্রিয় পরিবারের কালীপদ। ক্রমে হয়ে উঠেছিলেন দক্ষ শিকারি। কোথাও বাঘ, নেকড়ে বা কোনও হিংস্র বন্যপ্রাণী বেরোলেই ডাক পড়ত তাঁর। সেই সুবাদে মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান থেকে বিহারেও গিয়েছিলেন।