Mamata Banerjee

সরকারের নানা দফতরকে তুলোধোনা মুখ্যমন্ত্রীরই

সাম্প্রতিক সময়ে আসানসোলে আবাসন চত্বরে পুকুর ‘ভরাট’, শিলিগুড়িতে মহকুমা পরিষদের সরকারি জমি উদ্ধারে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত— রাজ্য জুড়ে এমন একের পর এক ঘটনা সামনে এসেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:৩৯
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

নতুন বছরের প্রথম প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল একগুচ্ছ সরকারি দফতর। তার মধ্যে রয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকাও বেশ কয়েকটি দফতরও। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, মন্ত্রিসভা নিয়ে দলের অন্দরে যে আলোচনা চলছে, তার আগে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরভিত্তিক এমন ‘মূল্যায়ন’ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের কটাক্ষ, রাজ্যের সব দফতরকে কাঠগড়ায় তোলার মাধ্যমে আসলে মমতা নিজের সরকারকেই প্রশ্নের মুখে ফেলছেন!

Advertisement

সাম্প্রতিক সময়ে আসানসোলে আবাসন চত্বরে পুকুর ‘ভরাট’, শিলিগুড়িতে মহকুমা পরিষদের সরকারি জমি উদ্ধারে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত— রাজ্য জুড়ে এমন একের পর এক ঘটনা সামনে এসেছে। এই আবহে বৃহস্পতিবার নবান্নে মমতা ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেছেন, “সরকারি জমি দখল করে অনেকে বসে আছেন। নতুন করে যেন আর দখল না হয়।” ফের এমন কিছু ঘটলে সংশ্লিষ্ট জেলার, স্থানীয় স্তরের পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিক এবং মন্ত্রী থেকে পুর-প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ-প্রশাসনের উদ্দেশে তাঁর আরও বার্তা, “বাইরে থেকে এসে সরকারি জমির উপরে বেআইনি ভাবে ফ্ল্যাট তৈরি করছেন। যেখান থেকে পারো ধরে আনো! দরকারে ইডি, সিবিআইয়ের মতো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে।”

বিভিন্ন স্তরে জরিমানার সংস্থান দিয়ে ‘দখলদারদের’ ৬ মাস সময় দেওয়ার কথাও শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। প্রশাসনের আধিকারিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “গরিব মানুষ ও সাধারণ মানুষের দোষ নেই। দোষটা যিনি তৈরি (বেআইনি নির্মাণ) করেছেন এবং যিনি অনুমতি দিয়েছেন। তাঁদের কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে। আমি করে থাকলে আমাকেও তা করো!” এই সমস্ত বিষয়ে ব্যবস্থার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন মমতা। ভূমি দফতরে টাকার বিনিময়ে এখনও ‘বেআইনি ভাবে মিউটেশন’ চলছে কি না, দফতরের সচিব বিবেক কুমারের কাছে তা জানতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সূত্রেই রাজ্যের মাছের ভেড়িগুলি নিয়ে দরপত্র ডেকে নিলাম করার উপরেও জোর দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

সেই সঙ্গে অর্থসচিব প্রভাত মিশ্রকে ‘ভদ্রলোক’ বলে উল্লেখ করেও দফতরের কাজকর্ম নিয়ে সরব হয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, “অর্থ দফতরে দু’এক-জন ছাড়া বেশির ভাগই বামপন্থী রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেন। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট বানিয়ে দিয়েছে! সারপ্রাইজ ভিজিটে দেখেছি, ফাইলের পর ফাইল পড়ে আছে। এটা মিটিং-মিছিলের জায়গা নয়।” বিভিন্ন দফতরের অধীনে থাকা নানা সংস্থা, ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, সোসাইটিগুলির কত টাকা অব্যবহৃত এবং ফিক্সড ডিপোজ়িট হয়ে পড়ে আছে, তা ১৫ দিনের মধ্যে তাঁকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।

মমতার এই ‘রোষে’র প্রেক্ষিতে তাঁর সরকারের কাজকর্মকেই কাঠগড়ায় তুলছে বিরোধীরা। বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় এক্স হ্যান্ড্‌লে বলেছেন, ‘রাজ্যের সমস্যাগুলির জন্য নিজেকে ছাড়া সকলকেই দায়ী করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘নিজের সরকারের এতগুলি দফতর যদি ফেল করে, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে পাশ করতে পারেন? সরকার যে মানুষের জন্য কাজ করছে না, সেটা বুঝে গেলে এর দায় মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের কটাক্ষ, ‘‘কিছু মন্ত্রী এবং আমলাকে লোক-দেখানো বকাঝকা করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর অপশাসন আড়াল করতে পারবেন না! মুখ্যমন্ত্রী-সহ এই সরকারের উচিত আয়না এনে নিজেদের মুখ দেখা!’’

প্রশাসনিক বৈঠকে এ দিন রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট, আলু পাচার, সরকারি দফতর থেকে বিরোধীদের কাছে তথ্য চলে যাওয়া, পরিবহণ দফতরকে ‘নীরব দফতর’ বলে কটাক্ষ করতেও শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্য দফতরের রোগী স্থানান্তর করা নিয়েও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement